Saturday, November 20, 2021

কচুরিপানা (Water hyacinth) আজ যা বিলুপ্তির পথে!!


 কচুরিপানা 
কচুরিপানাঃ-(Water hyacinth)-কচুরিপানা একটি জলজ উদ্ভিদ। সাত প্রজাতির কচুরিপানার বংশধর রয়েছে বলে উদ্ভিদ শাস্ত্রে জানা যায়। কচুরিপানা মুক্তভাবে ভাসমান বহুবর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। এটি পুরু, চকচকে এবং ডিম্বাকৃতির পাতাবিশিষ্ট , কচুরিপানা পানির উপরিপৃষ্ঠের ওপর ১ মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। এর কাণ্ড থেকে দীর্ঘ, তন্তুময়, বহুধাবিভক্ত মূল বের হয়, যার রং বেগুনি-কালো। একটি পুষ্পবৃন্ত থেকে ৮-১৫ টি আকর্ষণীয় ৬ পাঁপড়ি বিশিষ্ট ফুলের থোকা তৈরি হয। কালের বিবর্তনে জলাশয়, খাল-বিল, নালা ও পুকুর ভরাট করনের মাধ্যমে বসতবাড়ী  ও কলকারখানা গড়ে উঠার কারনে এ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কচুরিপানা বর্তমানে বিলুপ্তির পথে।

কচুরিপানা বর্তমানে খাদ্য তালিকােতও রয়েছেঃ-(Water hyacinth is also on the food list at present)-এটির ডাটা ও ফুল গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর তরকারিতে রান্নার তালিকায় রয়েছে বহুকাল ধরে। ডাক্তারি ভাষায় জানা যায়-এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে । আছে ভিটামিন এ, বি, সি এবং ক্যালসিয়াম। এটি একটু বেশি তেলে চিংড়ি দিয়ে রান্না করলে খুবই শুস্বাদু হয়। শুঁটকি ও ইলিশ হলে সোনায় সোহাগা।চাইলে নারকেলের দুধ দিয়েও কচুরির ডাঁটা রাঁধতে পারেন, কচুরির ফুল ডিমের সঙ্গে ভেজে খাওয়াসহ বেসন দিয়েও ভেজে খাওয়া যায়।

কচুরিপানা দেশীয় মাছের নিরাপদ আশ্রয় ও কৃষিতে ব্যবহারঃ-(Water hyacinth is a safe haven for native fish and is used in agriculture)-মাছ চাষে কচুরিপানার ব্যবহার রয়েছে ব্যাপক, গরমে এটি পুকুরের পানি শীতল রাখে। দেশীয় মাছ কচুরিপানার নিচে নিরাপদ আশ্রয় খোঁজে। কচুরির দাড়ির মতো শিকড়ের ভাঁজে ভাঁজে মাছ আশ্রয় নেয়। চিংড়ি, কই মাছের খুব প্রিয় আবাস এই কচুরিপানা। চাষিরা অগ্রহায়ণ মাসে কচুরিপানা তুলে চিংড়ি, কই মাছ ধরেন। আলু, হলুদ-আদা, করলা ও পটোলের খেতে কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে দেন চাষিরা, এতে ফসলের ফলন বাড়ে। কচুরিপানা  গ্রামাঞ্চলের কৃষকগন গর্ত করে কচুরিপানার ঢিবি তৈরীকরে পচিয়ে উত্তম জৈবসার তৈরী করে থাকে। কার্তিকমাসে গ্রামাঞ্চলের কৃষকেরা কচুরিপানা গোখাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করে থাকে। মৎস্য চাষীরা কচুরিপানার শেকড় রাসায়নিক সারের মাধ্যমে পচিয়ে মাছের সুষম খাদ্য তৈরী করছেন।

মশার প্রজনন ক্ষেত্র কচুরিপানাঃ-(Mosquito breeding ground water hyacinth)-জলাশয়, পুকুর, খাল-বিল ও নালা-নর্দমায় কচুরিপানার ফুল প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করলেও  মশার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্রজননক্ষেত্র এই কচুরিপানা। বিশ শতকের প্রথমার্ধে কচুরিপানার জলাশয়ে প্রজননকৃত মশার মাধ্যমে ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়েছিল ব্যাপক ভাবে।

কচুরিপানার জন্ম-মৃত্যুঃ-(Birth and death of water hyacinth)-এটি জলাশয়, নালা, বিল ও পুকুরে সূর্যের তাপ বিকিরণের ফলে শেওলার অণু থেকে জন্মগ্রহন করে। এটি নোনা পানিতে জন্মেনা। এটি শীতের সময়  ধীরে ধীরে মরে যায়।

লেখক/Author

অমিতাব বর্মণ।
সাংবাদিক ও ব্লগার
ভেন্ডাবাড়ী, পীরগঞ্জ, রংপুর।
২০/১১/২০২১ইং।

1 comment:

anjarul said...

অনেক অনেক সুন্দর হয়েছে।