Saturday, December 25, 2021

আকন্দ গাছের (Akand tree) রয়েছে অফুরান্ত ভোজষ/ঔষধি গুন !!

আকন্দ গাছের পরিচিতিঃ- (Introduction to Akand tree)-প্রচীনকালে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার ডোবা, নালা, নদীর পাড়সহ ঝোপ-জঙ্গলে অযত্ন ও অবহেলায় বেড়ে উঠতে দেখা গেলেও বর্তমানে তা খুজে পাওয়া দায়। এটি একটি ঝোপ জাতীয় গুল্ম উদ্ভিদ গাছ, এর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে-(Calotropis Gigantea. C. Procera.)।  এ গাছটির রয়েছে অফুরান্ত ভেজষ/ঔষধি গুন। 

আকন্দ গাছের গঠন ও আকৃতিঃ- (Structure and shape of Akanda tree)- এ গাছটি ৮-১০ ফুট উচু হয়ে থাকে। সাধারনত  আকন্দ।  শ্বেত আকন্দের ফুলের রং সাদা এবং লাল আকন্দের ফুলের রং বেগুনি হয়ে থাকে। গাছের ছালের রং ধূসর বর্নের হয়ে থাকে,এর পাতা ৬-৮ইঞ্চি লম্বা হয়। এর শাখা প্রশাখা ভেঙ্গে গেলে ধুধের ন্যায় সাদা আঠা বের হয়। এ গাছে ফুল ফুঠলে দেখতে অপরুপ লাগে, ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্য এ গাছে ফুল ফোটে এবং জুনের মাঝা-মাঝিতে ফল হয়।  আগষ্ট থেকে নভেম্বরের মধ্য এর ফল পেকে যায়। 

আকন্দ গাছের ব্যবহারঃ-(Use of Akand tree)- বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ ও ভোজষ শাস্ত্র থেকে জানা যায়-প্রাচীনকালে গ্রামাঞ্চলের বৈদ্য/কবিরাজ গন আকন্দের গাছের ছাল, আঠা, শেকড় ও পাতাদিয়ে বেশকিছু জটিল এবং কঠিন রোগের উৎকৃষ্ট মানের চিকিৎসা দেয়াহত। বর্তমানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আয়ুর্বেদীক ও ইউনানী শাস্ত্রে এর ব্যবহার ব্যপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

আকন্দ গাছ বানিজ্যিক ভাবে চাষঃ-(Akand trees are cultivated commercially)- বাংলাদেশ কৃষি ও উদ্ভিদ গবেশনা দপ্তরের সূত্রমতে জানা যায়-বর্তমানে দেশের বেশ কয়েকটি আয়ুর্বেদীক ও ইউনানি ঔষধ কোম্পানী নিজেদের ব্যবহারের জন্য নিজস্ব জমিতে বানিজ্যিক ভাবে আকন্দ গাছের চাষাবাদ শুরু করেছেন। সেই সাথে সাধারন কৃষকদেরও এটি বানিজ্যিক ভাবে চাষাবাতদর জন্য উদ্বুদ্ধ করছেন। তবে কিছু কিছু নার্সারিতে ইতিমধ্যে বানিজ্যিক চাষাবাদ শুরু করেছে। এটি বানিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ করলে একর প্রতি ১লক্ষ থেকে ১লক্ষ ৩০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। কারন বর্তমানে ঔষধ কোম্পানি গুলোতে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

আকন্দ গাছের বীজ ও চাষাবাদঃ-(Akand tree seeds and cultivation-)- অন্যান্য উদ্ভিদ গাছের থেকে আকন্দ গাছের সহসায় দ্রুত বংশ বিস্তার করা সম্ভব। কারন এর শুধু ফল খেকেই বীজ হয় না, এর শেকর, মোথা, সাকা প্রসাকার অংশ থেকেও বংশ বিস্তার করে। ৩-৪ ফিট দুরত্বে এর চারা লাগিয়ে এর চাষ করা যায়। এটি চাষে তেমন কোন রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না। এটির ছাল/বাকল, পাতা, আঠা, শেকর, মোথা সব কিছুই ঔষধি।

আকন্দ গাছের প্রাপ্তিস্থানঃ-(Receipt of acacia tree)- আকন্দ গাছ শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারত, চীন, পাকিস্থান, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা, ফিলিপাইন ও মালোশিয়াতেও দেখতে পাওয়া যায়।

আকন্দ গাছের ঔষধি গুন ও ব্যবহার বিধিঃ-(Medicinal properties and rules of use of Akand tree)- (১) আকন্দ  গাছের শিকরের ছাল গুড়াকরে আকন্দের আঠায় ভিজিয়ে ভলেভাবে শুকিয়ে চুরুট বানিয়ে ধূমপান করলে শ্বাসকষ্ঠের অসম্ভব উপকার পাওয়া যায়। (২) ০.৬৫ গ্রাম পরিমান আকন্দের পাতার পোড়াঁছাই পানিতে মিশিয়ে পান করলে গুরুতর এসিডিটি খেকে দ্রুত উপশম পাওয়া যায়। (৩) আকন্দ গাছের ২০-৩০গ্রাম আঠার সাথে ৩ গ্রাম শুকনো হলুদের গুড়ো মিশিয়ে তুলাদিয়ে নিয়মিত কয়েকদিন ছুঁলি বা মেঁছতায় লাগালে চিরতরের তা ভাল হবে। (৪) শরীরের চুলকানি ও পাচড়ায় পরিমানমত আকন্দের আঠা ও সহপরিমান তিলের তেল এবং হলুদের গুড়োর অর্ধেক পরিমানে মিশিয়ে মলম তৈরি করে নিয়মিত ঘুমানোর আগে লাগালে কয়েকদি লাগালে দ্রুত উপশম পাওয়া যাবে, (৫) কানের ভিতরের ক্ষতজনিত যন্ত্রনায় আকন্দের পাতার দুপাশে পুরোনো ঘি মাখিয়ে তা আগুনে ভালভাবে সেঁকদিয়ে সেই ঘি নিংড়েনিয়ে কানেদিয়ে তুলাদ্বারা কান বন্ধ করে ঘুমানোর আগে দুদিন ব্যবহার করলেই দ্রুত উপশম হবে। (৬) বাতের ব্যাথা ও ফুলা যন্ত্রনায় আকন্দ গাছের আঠার সাথে খাঁটি শরিষার তেল মিশিয়ে মালিশ করলে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা যায়। (৭) গৃহ পালিত গরু-ছাগলের গলফুঁলা রোগে আকন্দ পাতা বেটেনিয়ে গলায় লাগিয়ে বালি গরম করে কাপড় দিয়ে ২-৩দিন তাপদিলে গলাফঁলা রোগ দ্রুত সেরে যাবে। (৮)  মানুষের শরীরের যে কোন আঘাত জনিত ফুঁলা জখক হলে আকন্দের পাতা দিয়ে তাপদিলে আরোগ্য হবে। (৯) বুকের জমাট বাধা কফ নিঃস্বরনে বুকে ভালভাবে পুরাতন ঘি মালিশ করার পর আকন্দের পাতাদিয়ে ঘন ঘন তাপদিলে কফ গলে দ্রুত বের হবে। (১০) আকন্দ পাতার রস নিয়মিত মাথায় ব্যবহার করলে টাক পড়া রোধসহ খুশকি দুর করে। (১১) দাতের ব্যাথায় আকন্দ পাতার রস তুলাদিয়ে দাতে লাগালে দ্রুত ব্যাথানাশ করে। (১২) আকন্দ পাতার রস ভালভাবে চুলায় ফুটিয়ে ৩-৪ চামুচ লবন দিয়ে খেলে ইহা কৃমিনাশকের কাজ করে(১৩)  আকন্দের শেকর ভালভাবে শুকিয়ে গুড়া করে ২ গ্রাম পরিমান কয়েকদিন নিয়মিত খেলে ক্ষুদামন্দাসহ হজম শক্তি বৃদ্ধিতে অতুলনীয় ফল হয়। (১৪)পায়ের গোদ হলে  আকন্দ গাছের শেকর  বেটেনিয়ে নিয়মিত প্রলেপ দিলে আরোগ্য লাভ করা যায়। (১৫) মানুষের শরীরের কাটাছেঁড়া, ক্ষতজনিত ফাঙ্গল থেকে রক্ষা পেতে আকন্দ পাতা সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে ক্ষতস্থান পরিস্কার করলে এটি এ্যান্টি-সেপ্টিক হিসেবে কাজ করবে। (১৬) আকন্দের পাতা বেটে মুখের ব্রনে লাগালে দ্রুত ব্রন ফেটে যায়

উপসংহারঃ-(Conclusion)- মোট কথা আকন্দ গাছকে একজন বাড়ীর অভিজ্ঞ ডাক্তার বলা হয়ে থাকে। এ কারনে প্রাচীন কালে প্রায় প্রতিটি বাড়ীর আশে পাশেই যত্ন সহকোরে আকন্দ গাছের চারা লালন পালন করা হত।

লেখক/Author

সাংবাদিক অমিতাব বর্মণ।

ভেন্ডাবাড়ী, পীরগঞ্জ-রংপুর।

বাংলাদেশ।

২৫/১২/২০২১ইং।


3 comments:

Unknown said...

Good

Unknown said...

ঘরোয়া চিকিৎসায় অনেক খুঁটিনাটি জানা হলো

Belayet said...

Very good.