Sunday, December 19, 2021

তালগাছ (Palm trees) বিলুপ্তে শুধু প্রকৃতির ঐতিহ্য নয়, জীববৈচিত্রের প্রাণ শংসয়ও বটে !!

তালগাছঃ- ((Palm trees)-বিশ্বকবি, কবিগুরু  তার তালগাছ কবিতায় লিথখছিলেন-“তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে উঁকিমারে আকাশে” তালগাছ এক সময় বাংলাদেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলের মেঠোপথসহ গ্রামাঞ্চলের পতিত জমিসহ জমির আইলেও অহরহ সারি সারি চোঁখে পড়ত। যা দেখে রীতিমত নয়ন জুড়িয়ে যেত। অপরুপ সাজে প্রকৃতির ঐতিহ্যকে গুরু গম্ভীরভাবে ফুটিয়ে তুলতো এই তালগাছ। তালগাছ শুধু প্রকৃতির ঐতিহ্য বা শোভাবের্ধেনে নয়, এ গাছটি পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্রের জীবন রক্ষায় যথেষ্ঠ ভূমিকা পালন করে থাকে। এ জন্য পরিবেশ বিদ ও উদ্ভিদবিদদের মতে তালগাছকে পরিবেশ ও জীবৈচিত্রের পরম বন্ধু বলা হয়ে থাকে। কালের বিবর্তনে উন্নয়নের যাতাকল এবং দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে পতিত জমিতে আবাসন ও বসতবাড়ী নির্মান করতে গিয়ে এ গাছগুলি কেটে বা উপড়ে ফেলে এর বিলুপ্ত ঘটানো হচ্ছে। পরিবেশবিদ প্রকৃতি বিজ্ঞান মতে বর্তমানে এটি সংরক্ষনে সরকারি কিংবা বে-সরকারি জোড়ালো কোন উদ্দেগ গ্রহন না করলে আগামী প্রজন্মের জীববৈচিত্রের বংশ বিস্তারে ভয়ানক মাশূল গুনতে হবে।

তাল এখন একটি দুর্লোভ ফলঃ (Rhythm is now a rare fruit)- পাকাঁতাল কিছুদিন আগেই গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজার গুলোতে হরহামেশাই পাওয়া যেত। বর্তমানে তা  পাওয়া কঠিন ব্যাপার। তালের বর্তমানে যথেষ্ঠ কদর থাকলেও  হাট-বাজার গুলোতে তেমন চোখে পড়েনা। বর্তমানে একটি তাল গ্রামাঞ্চলেই ৫০ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছ, ঢাকা শহরে ১শত থেকে ১৫০ টাকা প্রায়। 
তালফল একাধিক সুস্বাধু খাবার তালিকায়ঃ-(Fruits are on the list of multiple delicacies) তালফল কাঁচা-পাকাঁ দু অবস্থাতেই খেতে অত্যান্ত সুস্বাদু। তাল গাছের রস থেকে তালমিশ্রি গুড় তৈরি করা হয়ে থাকে। স্ত্রী ও পুরুষ উভয় তালগাছ থেকে রস সংগ্রহ করা যায়। একটি তালগাছ থেকে দৈনিক ৮-১০লিটার পরিমান রস সংগ্রহ করা যায়। পাকাঁ তালের রসদিয়ে তালপিঠা একটি মজাদার খাবার, তালের গুড় দিয়ে পাঠালি, িবড়া, লুচি পায়েস ইত্যাদি তৈরি হয়। কাঁচা অবস্থাতেও তালের শ্বাস খেতে অত্যান্ত রস গোল্লার ন্যায় রসালো ও সুস্বাদু হয়ে থাকে। শ্রাবনওভাদ্রমাস হচ্ছে পাকাঁ তালের মৌসুম।
তালগাছের কোন অংশ অপ্রয়োজনীয় নয়ঃ(No part of the palm tree is unnecessary) প্রাচীনকাল থেকে তালগাছ মানব জীবনের ব্যবহারিক জীবনে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করে আসছিল। অধুনিকতার ছোঁয়ার পূর্বে গরমের সময়ে তালপাতার হাতপাখাই ছিল একমাত্র ভরসা। শুধুকি তাই ? তালপাতা দিয়ে আরও তৈরি হত-মাদুর, মাদুলি, টুপি, ছাতা, বাজার করা থলে, ঝুড়ি, ব্রাশ, পাপোশ, বাস্কেটসহ মাছ ধরার নানা উপকরন। এ ছাড়াও তাল পাতার মাঝের শলার ন্যায় আশঁ দিয়ে তৈরি করা হত বিভিন্ন প্রকার ঝাড়ু সহ ঘরের দরজা ও জানালার কাটি পর্দাসহ  এর পাতাদিয়ে ঘরের ছাউনিও দেয়া হত। যা অত্যান্ত মজবুত ও সর্বদা পরিবেশ বান্ধব। রান্নার কাজেও লাকড়ি হিসেবেও ব্যবহার হত এ তাল পাতা। তালগাছের গোঁড়ার অংশ দিয়ে সেই সময় ডিঙ্গি নৌকা, ঘরের খুঁটি, আড়া, রুইয়া, বাটাম, কৃষকের লাঙ্গলের ঈসও তৈরি করা হত। যা গ্রামীন অর্থনীতিতে একটি বিশেষ অবদান রাখতো।
তালফলের পুষ্ঠি ও ঔষধিগুনঃ-  (Nutrition and medicinal properties of palm) তালফলে অন্যান্য ফলের ন্যায় বিভিন্ন প্রকার মিনারেল ও ভিটামিন ছাড়াও ক্যালসিয়াম ও ক্যািলোরির উপস্থিতি অনেক বেশী পাওয়া যায়। বিভিন্ন চিকিৎসা শাস্ত্র থেকে জানা যায়-তালফলের রস পান করলে (১) শরীর ঠান্ডা রাখে (২) ক্লান্তি দুর করে (৩) দেহে প্রচুর শক্তি যোগায় (৪) অনিদ্রার অবসান করে (৫) পুরাতন আমাশয় নিরাময় করে (৬) নারী/পুরুষের মুত্র প্রবাহ কমে গেলে প্রবাহ বৃদ্ধিতে যথেষ্ঠ সহায়ক । (৭) কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেটের পীড়া উপশম করে (৮) পিত্তনাশক ও যকৃতের পীড়ায় যথেষ্ঠ উপকারি (৯) ইহা ছাড়াও তালের রসের মিশ্রি বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের সর্দি-কাশিতে ফলপ্রদ কাজ করে। 
তালগাছ প্রকৃতি ও জীববৈচিত্রের প্রকৃত বন্ধুঃ-  (Palm tree is a true friend of nature and biodiversity) জলবায়ু গবেষক এবং পরিবেশ ও প্রকৃতিবিদদের মতে একমাত্র তালগাছেই হচ্ছে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্রের প্রকৃত বন্ধু। কারন প্রকৃতিতে যত প্রকার উদ্ভিদ গাছ রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশী পরিমানে অক্সিজেন সরবরাহ ও ক্ষতিকর পদার্থ ও বায়ু নিঃস্বরক কারি গাছই হচ্ছে তালগাছ। ফলে জীববৈচিত্রের জীবনকে সুস্থ্য ও সাভাবিক রাখতে এর জুড়িনেই। শুধু কি তাই ? বর্ষাকালে বজ্রপাতের হাত থেকে অসংখ্য পশু-পাখি ও মানুষের জীবন রক্ষায় তালগাছের বিকল্পি আর কিছু নেই। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ঘুর্নিঝড়, সাইক্লোন, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টির মত মহামারি থেকে রক্ষায়ি এই গাছ ঈশ্বরের আশীর্বাদ হিসেবে কাজ করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় বর্তমানে এ মহামুল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদটি বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। ফলে ধরে ধীরে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্রকে পড়তে হচ্ছে নানা প্রাকৃতিক রোষানলে। এ থেকে পরিত্রান পেতে হলে পতিত জমিসহ রাস্তার দুপাশে এবং উপকুলিও অঞ্চল গুলোতে লাগাতে হবে তালসহ পাম গোত্রিয় গাছ।
বর্তমানে বজ্রপাতে অসংখ্য মৃত্যুহার  ( At present innumerable deaths due to lightning) একটি বে-সরকারি সংস্থাসহ সরকারি জরিপ মেতাবেক জানা যায় ২০০৯-২০২০ইং সাল ৩ হাজারেরও অধিক লোক বজ্রপাতে মারাগেছে।  গড়ে প্রতি বছর ২৫০-৩০০জন লোকের প্রানহানি ঘটে থাকে। সরকারি ভাবে  ২০১৬ সালে  বজ্রপাতে মৃত্যকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সেই সাথে দেশব্যাপি সরকারি উদ্দেগে প্রায় ২লক্ষ তালগাছের চারা রোপন করা হয়। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনসহ বে-সরকারি সংস্থার মাধ্যমে জনসচেনতা সৃষ্টি পুর্বক সাধারন জনগোষ্টিকেও এগিয়ে আসা দরকার বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, নইলে তালগাছ বিলুপ্তে শুধু প্রকৃতি নয়, পৃথিবীর জীব বৈচিত্রের প্রান সংশয় মারাক্তক আকার ধারন করতে পারে বলে মনে করেন প্রকৃতি ও পরিবেশ বিষেশজ্ঞরা।
লেখক/Author
সাংবাদিক অমিতাব বর্মণ।
ভেন্ডাবাড়ী, পীরগঞ্জ-রংপুর।
বাংলাদেশ।
১৯-১২-২০২১ইং।

3 comments:

Unknown said...

বাস্তব সত্য

anjarul said...

সুন্দর উপস্থাপনা।

Belayet said...

Very good.