Saturday, December 25, 2021

আকন্দ গাছের (Akand tree) রয়েছে অফুরান্ত ভোজষ/ঔষধি গুন !!

আকন্দ গাছের পরিচিতিঃ- (Introduction to Akand tree)-প্রচীনকালে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার ডোবা, নালা, নদীর পাড়সহ ঝোপ-জঙ্গলে অযত্ন ও অবহেলায় বেড়ে উঠতে দেখা গেলেও বর্তমানে তা খুজে পাওয়া দায়। এটি একটি ঝোপ জাতীয় গুল্ম উদ্ভিদ গাছ, এর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে-(Calotropis Gigantea. C. Procera.)।  এ গাছটির রয়েছে অফুরান্ত ভেজষ/ঔষধি গুন। 

আকন্দ গাছের গঠন ও আকৃতিঃ- (Structure and shape of Akanda tree)- এ গাছটি ৮-১০ ফুট উচু হয়ে থাকে। সাধারনত  আকন্দ।  শ্বেত আকন্দের ফুলের রং সাদা এবং লাল আকন্দের ফুলের রং বেগুনি হয়ে থাকে। গাছের ছালের রং ধূসর বর্নের হয়ে থাকে,এর পাতা ৬-৮ইঞ্চি লম্বা হয়। এর শাখা প্রশাখা ভেঙ্গে গেলে ধুধের ন্যায় সাদা আঠা বের হয়। এ গাছে ফুল ফুঠলে দেখতে অপরুপ লাগে, ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্য এ গাছে ফুল ফোটে এবং জুনের মাঝা-মাঝিতে ফল হয়।  আগষ্ট থেকে নভেম্বরের মধ্য এর ফল পেকে যায়। 

আকন্দ গাছের ব্যবহারঃ-(Use of Akand tree)- বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ ও ভোজষ শাস্ত্র থেকে জানা যায়-প্রাচীনকালে গ্রামাঞ্চলের বৈদ্য/কবিরাজ গন আকন্দের গাছের ছাল, আঠা, শেকড় ও পাতাদিয়ে বেশকিছু জটিল এবং কঠিন রোগের উৎকৃষ্ট মানের চিকিৎসা দেয়াহত। বর্তমানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আয়ুর্বেদীক ও ইউনানী শাস্ত্রে এর ব্যবহার ব্যপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

আকন্দ গাছ বানিজ্যিক ভাবে চাষঃ-(Akand trees are cultivated commercially)- বাংলাদেশ কৃষি ও উদ্ভিদ গবেশনা দপ্তরের সূত্রমতে জানা যায়-বর্তমানে দেশের বেশ কয়েকটি আয়ুর্বেদীক ও ইউনানি ঔষধ কোম্পানী নিজেদের ব্যবহারের জন্য নিজস্ব জমিতে বানিজ্যিক ভাবে আকন্দ গাছের চাষাবাদ শুরু করেছেন। সেই সাথে সাধারন কৃষকদেরও এটি বানিজ্যিক ভাবে চাষাবাতদর জন্য উদ্বুদ্ধ করছেন। তবে কিছু কিছু নার্সারিতে ইতিমধ্যে বানিজ্যিক চাষাবাদ শুরু করেছে। এটি বানিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ করলে একর প্রতি ১লক্ষ থেকে ১লক্ষ ৩০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। কারন বর্তমানে ঔষধ কোম্পানি গুলোতে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

আকন্দ গাছের বীজ ও চাষাবাদঃ-(Akand tree seeds and cultivation-)- অন্যান্য উদ্ভিদ গাছের থেকে আকন্দ গাছের সহসায় দ্রুত বংশ বিস্তার করা সম্ভব। কারন এর শুধু ফল খেকেই বীজ হয় না, এর শেকর, মোথা, সাকা প্রসাকার অংশ থেকেও বংশ বিস্তার করে। ৩-৪ ফিট দুরত্বে এর চারা লাগিয়ে এর চাষ করা যায়। এটি চাষে তেমন কোন রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না। এটির ছাল/বাকল, পাতা, আঠা, শেকর, মোথা সব কিছুই ঔষধি।

আকন্দ গাছের প্রাপ্তিস্থানঃ-(Receipt of acacia tree)- আকন্দ গাছ শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারত, চীন, পাকিস্থান, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা, ফিলিপাইন ও মালোশিয়াতেও দেখতে পাওয়া যায়।

আকন্দ গাছের ঔষধি গুন ও ব্যবহার বিধিঃ-(Medicinal properties and rules of use of Akand tree)- (১) আকন্দ  গাছের শিকরের ছাল গুড়াকরে আকন্দের আঠায় ভিজিয়ে ভলেভাবে শুকিয়ে চুরুট বানিয়ে ধূমপান করলে শ্বাসকষ্ঠের অসম্ভব উপকার পাওয়া যায়। (২) ০.৬৫ গ্রাম পরিমান আকন্দের পাতার পোড়াঁছাই পানিতে মিশিয়ে পান করলে গুরুতর এসিডিটি খেকে দ্রুত উপশম পাওয়া যায়। (৩) আকন্দ গাছের ২০-৩০গ্রাম আঠার সাথে ৩ গ্রাম শুকনো হলুদের গুড়ো মিশিয়ে তুলাদিয়ে নিয়মিত কয়েকদিন ছুঁলি বা মেঁছতায় লাগালে চিরতরের তা ভাল হবে। (৪) শরীরের চুলকানি ও পাচড়ায় পরিমানমত আকন্দের আঠা ও সহপরিমান তিলের তেল এবং হলুদের গুড়োর অর্ধেক পরিমানে মিশিয়ে মলম তৈরি করে নিয়মিত ঘুমানোর আগে লাগালে কয়েকদি লাগালে দ্রুত উপশম পাওয়া যাবে, (৫) কানের ভিতরের ক্ষতজনিত যন্ত্রনায় আকন্দের পাতার দুপাশে পুরোনো ঘি মাখিয়ে তা আগুনে ভালভাবে সেঁকদিয়ে সেই ঘি নিংড়েনিয়ে কানেদিয়ে তুলাদ্বারা কান বন্ধ করে ঘুমানোর আগে দুদিন ব্যবহার করলেই দ্রুত উপশম হবে। (৬) বাতের ব্যাথা ও ফুলা যন্ত্রনায় আকন্দ গাছের আঠার সাথে খাঁটি শরিষার তেল মিশিয়ে মালিশ করলে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা যায়। (৭) গৃহ পালিত গরু-ছাগলের গলফুঁলা রোগে আকন্দ পাতা বেটেনিয়ে গলায় লাগিয়ে বালি গরম করে কাপড় দিয়ে ২-৩দিন তাপদিলে গলাফঁলা রোগ দ্রুত সেরে যাবে। (৮)  মানুষের শরীরের যে কোন আঘাত জনিত ফুঁলা জখক হলে আকন্দের পাতা দিয়ে তাপদিলে আরোগ্য হবে। (৯) বুকের জমাট বাধা কফ নিঃস্বরনে বুকে ভালভাবে পুরাতন ঘি মালিশ করার পর আকন্দের পাতাদিয়ে ঘন ঘন তাপদিলে কফ গলে দ্রুত বের হবে। (১০) আকন্দ পাতার রস নিয়মিত মাথায় ব্যবহার করলে টাক পড়া রোধসহ খুশকি দুর করে। (১১) দাতের ব্যাথায় আকন্দ পাতার রস তুলাদিয়ে দাতে লাগালে দ্রুত ব্যাথানাশ করে। (১২) আকন্দ পাতার রস ভালভাবে চুলায় ফুটিয়ে ৩-৪ চামুচ লবন দিয়ে খেলে ইহা কৃমিনাশকের কাজ করে(১৩)  আকন্দের শেকর ভালভাবে শুকিয়ে গুড়া করে ২ গ্রাম পরিমান কয়েকদিন নিয়মিত খেলে ক্ষুদামন্দাসহ হজম শক্তি বৃদ্ধিতে অতুলনীয় ফল হয়। (১৪)পায়ের গোদ হলে  আকন্দ গাছের শেকর  বেটেনিয়ে নিয়মিত প্রলেপ দিলে আরোগ্য লাভ করা যায়। (১৫) মানুষের শরীরের কাটাছেঁড়া, ক্ষতজনিত ফাঙ্গল থেকে রক্ষা পেতে আকন্দ পাতা সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে ক্ষতস্থান পরিস্কার করলে এটি এ্যান্টি-সেপ্টিক হিসেবে কাজ করবে। (১৬) আকন্দের পাতা বেটে মুখের ব্রনে লাগালে দ্রুত ব্রন ফেটে যায়

উপসংহারঃ-(Conclusion)- মোট কথা আকন্দ গাছকে একজন বাড়ীর অভিজ্ঞ ডাক্তার বলা হয়ে থাকে। এ কারনে প্রাচীন কালে প্রায় প্রতিটি বাড়ীর আশে পাশেই যত্ন সহকোরে আকন্দ গাছের চারা লালন পালন করা হত।

লেখক/Author

সাংবাদিক অমিতাব বর্মণ।

ভেন্ডাবাড়ী, পীরগঞ্জ-রংপুর।

বাংলাদেশ।

২৫/১২/২০২১ইং।


Sunday, December 19, 2021

তালগাছ (Palm trees) বিলুপ্তে শুধু প্রকৃতির ঐতিহ্য নয়, জীববৈচিত্রের প্রাণ শংসয়ও বটে !!

তালগাছঃ- ((Palm trees)-বিশ্বকবি, কবিগুরু  তার তালগাছ কবিতায় লিথখছিলেন-“তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে উঁকিমারে আকাশে” তালগাছ এক সময় বাংলাদেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলের মেঠোপথসহ গ্রামাঞ্চলের পতিত জমিসহ জমির আইলেও অহরহ সারি সারি চোঁখে পড়ত। যা দেখে রীতিমত নয়ন জুড়িয়ে যেত। অপরুপ সাজে প্রকৃতির ঐতিহ্যকে গুরু গম্ভীরভাবে ফুটিয়ে তুলতো এই তালগাছ। তালগাছ শুধু প্রকৃতির ঐতিহ্য বা শোভাবের্ধেনে নয়, এ গাছটি পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্রের জীবন রক্ষায় যথেষ্ঠ ভূমিকা পালন করে থাকে। এ জন্য পরিবেশ বিদ ও উদ্ভিদবিদদের মতে তালগাছকে পরিবেশ ও জীবৈচিত্রের পরম বন্ধু বলা হয়ে থাকে। কালের বিবর্তনে উন্নয়নের যাতাকল এবং দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে পতিত জমিতে আবাসন ও বসতবাড়ী নির্মান করতে গিয়ে এ গাছগুলি কেটে বা উপড়ে ফেলে এর বিলুপ্ত ঘটানো হচ্ছে। পরিবেশবিদ প্রকৃতি বিজ্ঞান মতে বর্তমানে এটি সংরক্ষনে সরকারি কিংবা বে-সরকারি জোড়ালো কোন উদ্দেগ গ্রহন না করলে আগামী প্রজন্মের জীববৈচিত্রের বংশ বিস্তারে ভয়ানক মাশূল গুনতে হবে।

তাল এখন একটি দুর্লোভ ফলঃ (Rhythm is now a rare fruit)- পাকাঁতাল কিছুদিন আগেই গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজার গুলোতে হরহামেশাই পাওয়া যেত। বর্তমানে তা  পাওয়া কঠিন ব্যাপার। তালের বর্তমানে যথেষ্ঠ কদর থাকলেও  হাট-বাজার গুলোতে তেমন চোখে পড়েনা। বর্তমানে একটি তাল গ্রামাঞ্চলেই ৫০ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছ, ঢাকা শহরে ১শত থেকে ১৫০ টাকা প্রায়। 
তালফল একাধিক সুস্বাধু খাবার তালিকায়ঃ-(Fruits are on the list of multiple delicacies) তালফল কাঁচা-পাকাঁ দু অবস্থাতেই খেতে অত্যান্ত সুস্বাদু। তাল গাছের রস থেকে তালমিশ্রি গুড় তৈরি করা হয়ে থাকে। স্ত্রী ও পুরুষ উভয় তালগাছ থেকে রস সংগ্রহ করা যায়। একটি তালগাছ থেকে দৈনিক ৮-১০লিটার পরিমান রস সংগ্রহ করা যায়। পাকাঁ তালের রসদিয়ে তালপিঠা একটি মজাদার খাবার, তালের গুড় দিয়ে পাঠালি, িবড়া, লুচি পায়েস ইত্যাদি তৈরি হয়। কাঁচা অবস্থাতেও তালের শ্বাস খেতে অত্যান্ত রস গোল্লার ন্যায় রসালো ও সুস্বাদু হয়ে থাকে। শ্রাবনওভাদ্রমাস হচ্ছে পাকাঁ তালের মৌসুম।
তালগাছের কোন অংশ অপ্রয়োজনীয় নয়ঃ(No part of the palm tree is unnecessary) প্রাচীনকাল থেকে তালগাছ মানব জীবনের ব্যবহারিক জীবনে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করে আসছিল। অধুনিকতার ছোঁয়ার পূর্বে গরমের সময়ে তালপাতার হাতপাখাই ছিল একমাত্র ভরসা। শুধুকি তাই ? তালপাতা দিয়ে আরও তৈরি হত-মাদুর, মাদুলি, টুপি, ছাতা, বাজার করা থলে, ঝুড়ি, ব্রাশ, পাপোশ, বাস্কেটসহ মাছ ধরার নানা উপকরন। এ ছাড়াও তাল পাতার মাঝের শলার ন্যায় আশঁ দিয়ে তৈরি করা হত বিভিন্ন প্রকার ঝাড়ু সহ ঘরের দরজা ও জানালার কাটি পর্দাসহ  এর পাতাদিয়ে ঘরের ছাউনিও দেয়া হত। যা অত্যান্ত মজবুত ও সর্বদা পরিবেশ বান্ধব। রান্নার কাজেও লাকড়ি হিসেবেও ব্যবহার হত এ তাল পাতা। তালগাছের গোঁড়ার অংশ দিয়ে সেই সময় ডিঙ্গি নৌকা, ঘরের খুঁটি, আড়া, রুইয়া, বাটাম, কৃষকের লাঙ্গলের ঈসও তৈরি করা হত। যা গ্রামীন অর্থনীতিতে একটি বিশেষ অবদান রাখতো।
তালফলের পুষ্ঠি ও ঔষধিগুনঃ-  (Nutrition and medicinal properties of palm) তালফলে অন্যান্য ফলের ন্যায় বিভিন্ন প্রকার মিনারেল ও ভিটামিন ছাড়াও ক্যালসিয়াম ও ক্যািলোরির উপস্থিতি অনেক বেশী পাওয়া যায়। বিভিন্ন চিকিৎসা শাস্ত্র থেকে জানা যায়-তালফলের রস পান করলে (১) শরীর ঠান্ডা রাখে (২) ক্লান্তি দুর করে (৩) দেহে প্রচুর শক্তি যোগায় (৪) অনিদ্রার অবসান করে (৫) পুরাতন আমাশয় নিরাময় করে (৬) নারী/পুরুষের মুত্র প্রবাহ কমে গেলে প্রবাহ বৃদ্ধিতে যথেষ্ঠ সহায়ক । (৭) কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেটের পীড়া উপশম করে (৮) পিত্তনাশক ও যকৃতের পীড়ায় যথেষ্ঠ উপকারি (৯) ইহা ছাড়াও তালের রসের মিশ্রি বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের সর্দি-কাশিতে ফলপ্রদ কাজ করে। 
তালগাছ প্রকৃতি ও জীববৈচিত্রের প্রকৃত বন্ধুঃ-  (Palm tree is a true friend of nature and biodiversity) জলবায়ু গবেষক এবং পরিবেশ ও প্রকৃতিবিদদের মতে একমাত্র তালগাছেই হচ্ছে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্রের প্রকৃত বন্ধু। কারন প্রকৃতিতে যত প্রকার উদ্ভিদ গাছ রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশী পরিমানে অক্সিজেন সরবরাহ ও ক্ষতিকর পদার্থ ও বায়ু নিঃস্বরক কারি গাছই হচ্ছে তালগাছ। ফলে জীববৈচিত্রের জীবনকে সুস্থ্য ও সাভাবিক রাখতে এর জুড়িনেই। শুধু কি তাই ? বর্ষাকালে বজ্রপাতের হাত থেকে অসংখ্য পশু-পাখি ও মানুষের জীবন রক্ষায় তালগাছের বিকল্পি আর কিছু নেই। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ঘুর্নিঝড়, সাইক্লোন, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টির মত মহামারি থেকে রক্ষায়ি এই গাছ ঈশ্বরের আশীর্বাদ হিসেবে কাজ করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় বর্তমানে এ মহামুল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদটি বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। ফলে ধরে ধীরে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্রকে পড়তে হচ্ছে নানা প্রাকৃতিক রোষানলে। এ থেকে পরিত্রান পেতে হলে পতিত জমিসহ রাস্তার দুপাশে এবং উপকুলিও অঞ্চল গুলোতে লাগাতে হবে তালসহ পাম গোত্রিয় গাছ।
বর্তমানে বজ্রপাতে অসংখ্য মৃত্যুহার  ( At present innumerable deaths due to lightning) একটি বে-সরকারি সংস্থাসহ সরকারি জরিপ মেতাবেক জানা যায় ২০০৯-২০২০ইং সাল ৩ হাজারেরও অধিক লোক বজ্রপাতে মারাগেছে।  গড়ে প্রতি বছর ২৫০-৩০০জন লোকের প্রানহানি ঘটে থাকে। সরকারি ভাবে  ২০১৬ সালে  বজ্রপাতে মৃত্যকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সেই সাথে দেশব্যাপি সরকারি উদ্দেগে প্রায় ২লক্ষ তালগাছের চারা রোপন করা হয়। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনসহ বে-সরকারি সংস্থার মাধ্যমে জনসচেনতা সৃষ্টি পুর্বক সাধারন জনগোষ্টিকেও এগিয়ে আসা দরকার বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, নইলে তালগাছ বিলুপ্তে শুধু প্রকৃতি নয়, পৃথিবীর জীব বৈচিত্রের প্রান সংশয় মারাক্তক আকার ধারন করতে পারে বলে মনে করেন প্রকৃতি ও পরিবেশ বিষেশজ্ঞরা।
লেখক/Author
সাংবাদিক অমিতাব বর্মণ।
ভেন্ডাবাড়ী, পীরগঞ্জ-রংপুর।
বাংলাদেশ।
১৯-১২-২০২১ইং।

Monday, December 13, 2021

জবাফুল (Jaba flowers) শুধু শোভাবর্ধনে নয়, নানা ঔষধি গুনেও ভরপুর !!

জবা ফুলঃ-(Jaba flowers)-প্রাচীন কাল থেকেই নানা প্রজাতি ফুলের গাছ সংগ্রহ করে হিন্দু রাজা-জমিদার সহ বংশিও বা খানদানি পরিবার গুলোতে বাগান করে শোভাবর্ধন সহ ফুলের মোহিত সুগন্ধ গ্রহন করা হত। আর এ জন্য বাগান গুলি করাহত বাড়ীর উঠান, বাড়ীর আঙ্গিনা ও শোবার ঘরের জানালা বরাবরে। বাগান পরিচর্যার জন্যই মাসিক বেতন দিয়ে রাখা হইত মালি। পৃথিবীতে এমন কোন ব্যাক্তি নেই যে, ফুলকে ভালবাসেনা। ফুল শুধু শোভাবর্ধনই নয়, ফুলকে পবিত্রতার প্রতিক হিসেবেও গন্য করাহয় আদিকাল থেকে। আদিকালে কবিরাজি মোতাবেক গাছের ছাল, লতা-পাতা, শেকর, ফল ও ফুল দিয়ে নানা প্রকার জটিল রোগের চিকিৎসা করাহত। এর মধ্যে জবাফুল একটি অন্যতম উপাদান, এ ফুলে অসংখ্য রোগের চিকিৎসা করা হত।

জবা ফুলের জন্ম ও প্রকারভেদঃ-(Birth and types of jaba flowers)-জবাফুরের গাছ বহু শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট একটি গুল্ম জাতীয় ফুলগাছ। এ ফুলের গাছটি বর্তমানে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে পাওয়া গেলেও মুলত এটি আমাদের দেশীয় ফুল নয়। উদ্ভিদ গবেষকদের মতামত ও আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের বরাত দিয়ে জানা যায়-মূলত এ ফুল গাছটির জন্ম চীনদেশে। বর্তমানে এ ফুল গাছ শুধু চীন বা বাংলাদেশেই নয়, মধ্য প্রাচ্যেও দেশ গুলোতেও হর-হামেশায় দেখা মেলে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১৫ থেকে ২০ ধরনের জবা দেখতে পাওয়া যায়, এরমধ্যে ঝুমকো ও লঙ্কা জবা অন্যতম। এ ফুলটি লাল, সাদা, পাটকিলে, গোলাপি, হলুদ, কমলা, নীলচে ও নীলচে-বেগুনিসহ মিশ্র বর্ণেরও জবা দেখতে পাওয়া যায়।

জবা ফুল গন্ধহীন হলেও নানান ঔষধি গুনে ভরপুরঃ-(Although jaba flower is odorless, it is full of various medicinal properties)-বাহারী রঙ্গের এ মন মুগ্ধকর ফুলটি গন্ধহীন হলোও নানান জটিল ও কঠিন রোগ নিরাময়ে এর জুড়িমেলা ভার। এটি নিঃসন্দেহে একটি অতুলনীয় ঔষধি ফুল গাছ। আদিকাল থেকেই কবিরাজি মতে ও আয়ুবের্দীক শাস্ত্রে রোগ নিরাময়ে এর ব্যবহার চলে আসছে। বর্তমানে এটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতেও গবেষনা পূর্বক রোগ নিরাময়ে এ্যলোপ্যাথিক, ইউনানি, হারবাল ও হোমিওপ্যাথিক শাস্ত্রে রোগ নিরাময়ে এর ব্যবহার আসংখাজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। উল্লিখিত চিকিৎসা শাস্ত্র পর্যালোচনায় জানা যায়-এটির ব্যবহারে নি¤œলিখিত রোগ সমুহ অনায়াসে নিরাময় সম্ভব-(১) চুল, দাড়ি, গোফ ও চোখের ভ্রæ পাতলা হলে জবাফুল বেটে নিয়মিত লাগালে আশ্চার্য্যজনক ফল পাওয়া যাবে। (২) শরীরের চামড়া উঠা রোগসহ যে কোন চর্মরোগে এ ফুলের রস লাগালে অসম্ভব ফল পাওয়া যায়। (৩) অতিরিক্ত আহারে অস্বস্তি ও অতিরিক্ত বমি বমি ভাব দেখা দিলে ৪-৫টি জবাফুল বেটে শরবত খেলে দ্রæত আরোগ্যলাভ হয়। (৪) ডায়াবেটিস জনিত মাত্রাতিরিক্ত প্রসাব হলে কয়েকদিন নিয়মিত জবাফুলের গাছের ছাল বেটে বেলা ১ চা চামুচ করে বেলা খেলে দ্রুত মাত্রাতিরিক্ত প্রসাব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। (৫) চোখেঁ কোন প্রকার সংক্রমন হলে জাবাফুলের রস ২-৩দিন কয়েক ফোটা করে লাগালে দ্রুত উপশম পাওয়া যায়। (৬) মেয়েদের অনিয়মিত মাসিকের ক্ষেত্রে ২-৩টি পঞ্চমূখি জবাফুলের কুড়ি বেটে শরবত কওে কয়েকদিন খেলে দ্রুত তা স্বাভাবিক হয়ে যাবে। (৭) ঠান্ডাজনিত জ¦র হলে কয়েকটি জবাফুলের পাতা সিদ্ধ করে চা তৈরী করে কয়েকবার পান করলে দ্রæত তা নিয়ন্ত্রন হবে। (৮) সাদা জবার পাপড়ি সিদ্ধ করে সেই পানি পান করলে বিষন্নতা দুর হয়। (৯) লাল জবার সিদ্ধ পানি খেলে শরীরের অতিরিক্ত লৌহজনিত ঘাটতি কমায়। (১০) জবাফুলের পেষ্ট তৈরী করে মাথার তালুতে নিয়মিত ব্যবহার করলে চুল পাকা রোধ করা সম্ভব, এতে পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম থাকায় মাথার ত্বকের পুষ্টিসহ চুলের গোড়া মজবুত ও সতেজ হওয়াসহ খুশকি রোধে খুবই কার্যকারি ভুমিকা রাখে। জবাফুল ঔষধের উপকরন হিসেবে অবশ্যই ভালোভাবে পানি দিয়ে পরিস্কার করে নিতে হবে, সেই সাথে ইহা সংরক্ষনের জন্য ফ্রিজ ব্যবহার করতে হবে।

জবাফুলের বানিজ্যিক চাষৎ-(Commercial cultivation of jaba flower)-জবাফুরের গাছ বিশেষ করে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় ও অন্যান্য ধর্মীয় বংশীও পরিবার গুলোতে শোভাবর্ধণের জন্য দেখতে পাওয়া যায়। বর্তমানে ইহার ছাহিদা ও গুরুত্বেও কারনে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় কিছু কিছু নার্সারিতে বানিজ্যিকভাবে জবাফুলের চাষ করা হচ্ছে। যা বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানিতে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। আবার অনেক ঔষধ কোম্পানি রয়েছে-তারা নিজেরাই নিজস্ব বাগানেই জবাফুলের চাষ করছেন।

লেখক/Author

সাংবাদিক অমিতাব বর্মণ।
ভেন্ডাবাড়ী, পীরগঞ্জ-রংপুর।
বাংলাদেশ।
১৩/১২/২০২১ইং।



Thursday, December 9, 2021

শিম (Bean) চাষে হচ্ছে কৃষকের অর্থনৈতিক মুক্তি !!


শিমঃ- ( Bean)-শীতকালে শিম (Bean) একটি খুবই জনপ্রিয় ও সুস্বাদু সব্জি। প্রাচীন কাল থেকেই এ সব্জিটি বাড়ীর পতিত জমিতে মাচা করে পারিবারিক ভাবে শুধুমাত্র পরিবারের চাহিদা পূরনের জন্য সনাতন পদ্ধিতিতে চাষাবাদ হয়ে আসছিল। কিন্তু বর্তমানে অধিক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারনে এর চাহিদাও বেড়েছে দ্বিগুন হারে। আর চাহিদা পুরনের লক্ষে সরকার সরকারিভাবে জেলা- উপজলার কৃষি অধিদপ্তরের মাধ্যমে অধিক উৎপাদনের লক্ষে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে পরামর্শ দেয়াসহ ফ্রিতে উন্নত আগাম জাাতের বীজ, সার সরবরাহ করছেন আসছেন। আগাম জাতের শিম চাষে অধিক মুনাফা হওয়ায় বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য কৃষক বর্তমানে একরকে একর জমিতে বানিজ্যিক ভাবে শিমচাষ করে অর্থনৈতিক ভাবে মুক্তি লাভ করেছেন। শিমচাষে পুজিও লাগে কম, আপনি যদি নতুন কৃষক হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে শুরুটা কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শ নিয়ে আগাম জাতের শিমচাষ দিয়ে বানিজ্যিক ভাবে করতে পারেন।
শিমচাষের আধুনিক পদ্ধতিঃ-(Modern methods of bean cultivation)-আগাম জাতের শিমচাষ করতে হলে প্র্রথমে আপনাকে জমি নির্বাচন করতে হবে। এটি সব ধরনের মাটিতেই চাষ করা যায়, তবে দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটিতে ভালো ফলন হয়। সিম গাছ জলাবদ্ধতা সহনশীল নয়, তাই উচু জমি নির্বাচন করতে হবে, যেন জমিতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস থাকে। এ ছাড়াও আপনি বাড়ির চালে, মাচায়, রাস্তা বা পুকুরের পাড় এমনকি জমির আইল ও গুল্ম জাতীয় গাছে তুলে দিয়েও শিম চাষ করতে পারেন।
শিমের জাত নির্বাচনঃ-(Selection of bean varieties)-রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান জানান-বানিজ্যিক ভাবে শিমচাষ করতে হলে অবশ্যই শিমের ভাল জাত নির্বাচন করতে হবে। সে ক্ষেত্রে র্গ্রীষ্মকালীন শিমের জাত অটো শিম খুব উপযুক্ত। এটি বৈশাখ-জৈষ্ঠ মাসে বপন করলে শ্রাবণ মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত বিরামহীন ফলন দিতে থাকে। তবে এ সময় ফলন একটু কম হয়। এছাড়াও আইরেট, ইপসা-১ ও ২, বিইউ শিম-৪, বারি শিম- ৩ ও ৭ সহ আরো কিছু জাত আছে, উল্লেখিত জাতগুলির চেয়ে বর্তমানে আলোচিত আগাম জাতের শিম হিসাবে কেরালা শিম ১ এর স্থান সবার উপরে। আগাম চাষের জন্য পুটি শিম ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া মাঝারি আগাম জাত হিসেবে বিইউ শিম-৩ আগস্ট মাস থেকেই বপন শুরু করা যায়। শীতকালীন জাতের মধ্যে বারি শিম-১ হচ্ছে সব থেকে উপযোগি। এছাড়াও বারি শিম-৬, নলডগ, হাতিকান, গোলগাদ্দা সহ আরো বহু ধরনের শিমের জাত রয়েছে। গ্রীষ্মকালে কেজি প্রতি ১০০ থেকে ১৪০ টাকা দরে শিম বিক্রি হয়, এবং শীতকালে আগাম শিম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বিক্রি করা যায়।
জমি প্রস্তুতকরণ ও বীজ বপনঃ-(Land preparation and sowing of seeds)-বানিজ্যিক ভাবে শিমচাষ করতে হলে জমি ভালভাবে কয়েকটি চাষ ও মই দিয়ে জমি সমান করে নিতে হবে। শেষ চাষে জৈব/গোবর সার শতক প্রতি এক বস্তা, কিছু ছাই, খৈলও দিতে হবে। ৩ মিটার প্রশস্ত বেড তৈরী করে বেডের দুই পাশে ২ মিটার পর পর মাদা তৈরী করে প্রতি মাদায় ১০০ গ্রাম টিএসপি, ৫০ গ্রাম এমপি এবং সামান্য জীপসাম দিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে ১ সপ্তাহ রেখে দিতে হবে। মাদার গর্ত ২ ফিট ব্যস ও ১.৫ ফিট গভিরতা থাকে। আগাম চাষের জন্য জৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে আর শীতকালীন শিম চাষের জন্য শ্রাবণ-ভাদ্র মাসের মধ্যে বীজ বপন করতে হবে। মাদা প্রতি ৩-৪ টা করে বীজ সুস্থ চারা রোপন করতে হবে।
শিম গাছের পরিচর্চা ও মাচা প্রস্তুতকরণঃ-(Bean plant care and scaffolding preparation)-শিম গাছ ডাল পালা নিতে শুরু করার সাথে সাথেই মাচার ব্যবস্থা করতে হবে। মাচায় গাছ উঠার জন্য বাশের কঞ্চি অথবা বাতি পতে দিতে হবে। যাতে শিম গাছ খুব সহজেই মাচায় উঠতে পারে।
শিম গাছের সঠিক যত্ন ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ-(Proper care of bean plants and application of chemical fertilizers)-বানিজ্যিকভাবে চাষাবাদের ক্ষেত্রে সার প্রয়োগের বিকল্প নেই। ফলন সংগ্রহের পর বা গাছের অবস্থা বুঝে পরিমাণ মতো ইউরিয়া, পটাশ, ডিএপি, জিংক, বোরন ইত্যাদি সার দিতে হবে। মাটি শুকিয়ে গেলে পানির ব্যবস্থা করতে হবে। হরমন হিসেবে ফ্লোরা, লিটোসেন ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে। শিম গাছের গোড়ায় মাটি দিয়ে একটু উচু করে রাখতে হবে যাতে পানি জমতে না পারে। সর্বদা গাছের গোড়া আগাছামুক্ত রাখতে হবে, চারা রোপনের ২-৩ সপ্তাহ পর পর মাদা প্রতি ৫০ গ্রাম করে ইউরিয়া ও পটাশ দিতে হবে। গাছের গোড়ার মাটি সর্বদা আগলা রাখতে হবে, গাছ মাচায় ওঠার আগে নিচে যে শাখা-প্রশাখা বের হয়, তা ছেটে দিতে হবে। মাচায় গাছ অনেক ঘন হয়ে গেলে পাতা ছেটে মাচা ফাঁকা করে দিয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। অনেকগুলো লতা এক সাথে জোড় নিলে তা আলাদা করে দিতে হবে।
পোকামাকড় ও রোগ বালাই ব্যবস্থাপনাঃ-(Insect and disease pest management)-
শিমের সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা হল ফল ছিদ্রকারী পোকা ও জাব পোকা। চারা অবস্থায় পাতা সুড়ঙ্গকারী এ পোকা মহা ক্ষতিকর। লাল ক্ষুদ্র মাকড়ষা ও অনেক সময় বেশ ক্ষতি করে থাকে, ফুল ফুটলে থ্রিপস ক্ষতি করতে পারে। ফল পেকে এলে বিন পড বাগ বা শিমের গান্ধি পোকা ক্ষতি করে। আইপিএম পদ্ধতি অনুসরণ করে এসব পোকামাকড় দমনের ব্যসস্থা নিতে হবে। শিমের সবচেয়ে মারাত্মক ২টি রোগ মোজেইক ও অ্যানথ্রাকনোজ।
ফলনঃ-(Yield)সঠিক ভাবে যতœ নিলে শতক প্রতি ৭০ থেকে ৮০ কেজি এবং হেক্টর প্রতি ১৫ থেকে ২০টন ফলন হতে পারে। শিমের ফুল ফোটার ২০-২৫ দিন পর ফসল সংগ্রহ করা যায়। ৪ মাসেরও বেশী সময় ধরে শিমের ফল পাওয়া যায়। শিমচাষে যে কোন সমস্যায় আপনি সরকারের জেলা ও উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে পরমর্শ গ্রহন করতে পারেন।

লেখক/Author
সাংবাদিক অমিতাব বর্মণ।
পীরগঞ্জ, রংপুর।
০৯/১২/২০২১ইং।

Saturday, December 4, 2021

গরুর গাড়ী ( Bullock cart) গ্রামীন জনপদের হারানো স্মৃতি!!

গরুরগাড়ীঃ-(Bullock cart)-গরুরগাড়ী বাংলাদেশের লোকজ সাংস্কৃতিতে এক সময় গুরুত্বপূর্ন ঐতিহ্য বহন করতো। প্রাচীনকালে এদেশের মানুষের যোগাযোগ, ব্যবসা-বানিজ্যেসহ বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের খানদানি ঐতিহ্যি বহন করাসহ দেশের অর্থনীতিতে একটি বিষেশ ভুমিকা রাখতো।কালের বিবর্তনে গ্রামবাংলার জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি আজ বিলুপ্তির পথে। গ্রামীন জনপদের মেঠোপথের অপরুপ শোভাবর্ধন কারি এ গরুরগাড়ী এখন শুধুই স্মৃতি আর স্মৃতি।
গরুরগাড়ী তৈরীর উপকরনঃ-(Bullock cart making equipment)--শালগাছের কাঠদিয়ে দক্ষকারিগর দিয়ে তৈরি করা হত গাড়ীর দুইটি গোলাকৃতির বড় বড় চাাকা, চাকার উপরে লোহার মোটা পাত ঢালাই করে বসিয়ে দেয়াহত চাকার উপরে। তারপর লোহার মোটা ঢুড়ি (বুশ) দিয়ে দুই চাকার সংযোগ দেয়াহত। তারপর বাশ ঝাড়ের দুই থেকে তিন বছরের পুরাতন বড়বাশ সংগ্রহ করে গাড়ীর বিছানা সংযুক্ত করা হত। যা খুবেই মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী হত। স্বাস্থ্যবান বলদ ও ষাঁড় গরুদারা এ গাড়ী টানাহত। গরুদিয়ে এ সকল গাড়ীতে ৩৫ থেকে ৪০ মন মালামাল বহন করা সম্ভব।
গরুরগাড়ীর প্রচলনঃ-(Introduction of bullock carts)- বিভিন্ন দার্নিক ও ইতিহাস বিদদের গ্রন্থ্য পর্যালোচনা করে জানা যায়-আজ থেকে প্রায়  ১৫-১৬ শ’ বছর পূর্বে ভারতীয় উপমহাদেশের সিন্ধু প্রদেশে ব্যবসায়িক কাজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে মালামাল বহনের জন্যই সর্বপ্রথম এ গরুরগাড়ীর ব্যবহার শুরু হয়। তারপর থেকে ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ে গ্রাম থেকে গ্রামে। মাঝেমধ্যে প্রত্যন্ত এলাকায় দু-একটি গরুর গাড়ি চোঁখে পড়লেও শহরাঞ্চলে একেবারেই দেখা যায় না। সে কারণে শহরের ছেলে মেয়েরা দূরের কথা, বর্তমানে গ্রামের ছেলে মেয়েরাও গরুর গাড়ি শব্দটির নাম শোনার সঙ্গে চমকে উঠবে।

লোকজ সাংস্কৃতিতে গরুরগাড়ীঃ-(Bullock cart in folk culture)- মালামাল বহনের জন্য এ গাড়ীর সৃষ্টি হলেও পর্বতীতে লোকজ সাংস্কৃতিতে একমাত্র ঐতিহ্যবাহী বাহন হিসেবেই স্থান পায় এই গাড়ীটি। বিশেষ করে বিয়েসাদীতে টাবড়যুক্ত গরুগাড়ীতে গ্রামের মেঠোপথ দিয়ে সারি সারিভাবে বরযাত্রী বোঝাই গাড়ীতে ঢোল-সানাই বাজিয়ে কনের বাড়ীতে যাওয়া, সে এক অন্য রকম দৃশ্য। গরুর গাড়ী ছাড়া বিয়ে যেন ঐতিহ্যবিহীন  হয়ে যায়। গরুগাড়ির চালককে বলা হয় গাড়িয়াল। সেই গাড়ীয়ালকে উদ্দেশ্য করে বাংলাদেশের রংপুর অঞ্চলে বিখ্যাত বিখ্যাত ভাওয়াইয়া শিল্পীগন রচিত করেছেন অসংখ্য গান। যা আজও হৃদয় স্পর্শ করে। যেমন-“ ওকি গাড়িয়াল ভাই, কত রহিম মুই পন্থের দিকে চাহিয়ারে” । বর্তমানে কালের বিবর্তনে নানা ধরনের মোটরযানের কারণে ধীর গতির এই যানটির ব্যবহার কমতে কমতে প্রায় বিলুপ্তি প্রায়। এখন মানুষ বিভিন্ন ধরণের প্রয়োজনীয় মালামাল বহনের জন্য ট্রাক, পাওয়ার টিলার, লরি, নসিমন-করিমনসহ বিভিন্ন মালগাড়ি ব্যবহার করছে। মানুষের যাতায়াতের জন্য রয়েছে মোটরগাড়ি, রেলগাড়ি, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যান।

অর্থনৈতিক উন্নয়নে গরুরগাড়ীঃ-(Bullock carts for economic development)- প্রাচীনকালে বাংলাদেশের গ্রামীন জনপদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গরুরগাড়ীর যথেষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। গ্রামীন জনগোষ্ঠি তাদের উৎপাদিত কৃষিপন্য বিপননের জন্য মাইলকে মাইল দুরে তৎকালিন হাট-বাজারে নিয়ে যেত। ফলে গ্রামীন জনগোষ্ঠির অর্থনৈতিক মান উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখত। আগামী প্রজন্ম যাদুঘরে গরুরগাড়ী দেখে বা নাম শুনে অবাক হবে।

লেখক/Author

সাংবদিক অমিতাব বর্মণ।

ভেন্ডাবাড়ী, পীরগঞ্জ-রংপুর।

০৪-১২-২০২১ইং।