শিমঃ- ( Bean)-শীতকালে শিম (Bean) একটি খুবই জনপ্রিয় ও সুস্বাদু সব্জি। প্রাচীন কাল থেকেই এ সব্জিটি বাড়ীর পতিত জমিতে মাচা করে পারিবারিক ভাবে শুধুমাত্র পরিবারের চাহিদা পূরনের জন্য সনাতন পদ্ধিতিতে চাষাবাদ হয়ে আসছিল। কিন্তু বর্তমানে অধিক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারনে এর চাহিদাও বেড়েছে দ্বিগুন হারে। আর চাহিদা পুরনের লক্ষে সরকার সরকারিভাবে জেলা- উপজলার কৃষি অধিদপ্তরের মাধ্যমে অধিক উৎপাদনের লক্ষে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে পরামর্শ দেয়াসহ ফ্রিতে উন্নত আগাম জাাতের বীজ, সার সরবরাহ করছেন আসছেন। আগাম জাতের শিম চাষে অধিক মুনাফা হওয়ায় বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য কৃষক বর্তমানে একরকে একর জমিতে বানিজ্যিক ভাবে শিমচাষ করে অর্থনৈতিক ভাবে মুক্তি লাভ করেছেন। শিমচাষে পুজিও লাগে কম, আপনি যদি নতুন কৃষক হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে শুরুটা কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শ নিয়ে আগাম জাতের শিমচাষ দিয়ে বানিজ্যিক ভাবে করতে পারেন।
শিমচাষের আধুনিক পদ্ধতিঃ-(Modern methods of bean cultivation)-আগাম জাতের শিমচাষ করতে হলে প্র্রথমে আপনাকে জমি নির্বাচন করতে হবে। এটি সব ধরনের মাটিতেই চাষ করা যায়, তবে দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটিতে ভালো ফলন হয়। সিম গাছ জলাবদ্ধতা সহনশীল নয়, তাই উচু জমি নির্বাচন করতে হবে, যেন জমিতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস থাকে। এ ছাড়াও আপনি বাড়ির চালে, মাচায়, রাস্তা বা পুকুরের পাড় এমনকি জমির আইল ও গুল্ম জাতীয় গাছে তুলে দিয়েও শিম চাষ করতে পারেন।
শিমের জাত নির্বাচনঃ-(Selection of bean varieties)-রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান জানান-বানিজ্যিক ভাবে শিমচাষ করতে হলে অবশ্যই শিমের ভাল জাত নির্বাচন করতে হবে। সে ক্ষেত্রে র্গ্রীষ্মকালীন শিমের জাত অটো শিম খুব উপযুক্ত। এটি বৈশাখ-জৈষ্ঠ মাসে বপন করলে শ্রাবণ মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত বিরামহীন ফলন দিতে থাকে। তবে এ সময় ফলন একটু কম হয়। এছাড়াও আইরেট, ইপসা-১ ও ২, বিইউ শিম-৪, বারি শিম- ৩ ও ৭ সহ আরো কিছু জাত আছে, উল্লেখিত জাতগুলির চেয়ে বর্তমানে আলোচিত আগাম জাতের শিম হিসাবে কেরালা শিম ১ এর স্থান সবার উপরে। আগাম চাষের জন্য পুটি শিম ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া মাঝারি আগাম জাত হিসেবে বিইউ শিম-৩ আগস্ট মাস থেকেই বপন শুরু করা যায়। শীতকালীন জাতের মধ্যে বারি শিম-১ হচ্ছে সব থেকে উপযোগি। এছাড়াও বারি শিম-৬, নলডগ, হাতিকান, গোলগাদ্দা সহ আরো বহু ধরনের শিমের জাত রয়েছে। গ্রীষ্মকালে কেজি প্রতি ১০০ থেকে ১৪০ টাকা দরে শিম বিক্রি হয়, এবং শীতকালে আগাম শিম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বিক্রি করা যায়।
জমি প্রস্তুতকরণ ও বীজ বপনঃ-(Land preparation and sowing of seeds)-বানিজ্যিক ভাবে শিমচাষ করতে হলে জমি ভালভাবে কয়েকটি চাষ ও মই দিয়ে জমি সমান করে নিতে হবে। শেষ চাষে জৈব/গোবর সার শতক প্রতি এক বস্তা, কিছু ছাই, খৈলও দিতে হবে। ৩ মিটার প্রশস্ত বেড তৈরী করে বেডের দুই পাশে ২ মিটার পর পর মাদা তৈরী করে প্রতি মাদায় ১০০ গ্রাম টিএসপি, ৫০ গ্রাম এমপি এবং সামান্য জীপসাম দিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে ১ সপ্তাহ রেখে দিতে হবে। মাদার গর্ত ২ ফিট ব্যস ও ১.৫ ফিট গভিরতা থাকে। আগাম চাষের জন্য জৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে আর শীতকালীন শিম চাষের জন্য শ্রাবণ-ভাদ্র মাসের মধ্যে বীজ বপন করতে হবে। মাদা প্রতি ৩-৪ টা করে বীজ সুস্থ চারা রোপন করতে হবে।
শিম গাছের পরিচর্চা ও মাচা প্রস্তুতকরণঃ-(Bean plant care and scaffolding preparation)-শিম গাছ ডাল পালা নিতে শুরু করার সাথে সাথেই মাচার ব্যবস্থা করতে হবে। মাচায় গাছ উঠার জন্য বাশের কঞ্চি অথবা বাতি পতে দিতে হবে। যাতে শিম গাছ খুব সহজেই মাচায় উঠতে পারে।
শিম গাছের সঠিক যত্ন ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ-(Proper care of bean plants and application of chemical fertilizers)-বানিজ্যিকভাবে চাষাবাদের ক্ষেত্রে সার প্রয়োগের বিকল্প নেই। ফলন সংগ্রহের পর বা গাছের অবস্থা বুঝে পরিমাণ মতো ইউরিয়া, পটাশ, ডিএপি, জিংক, বোরন ইত্যাদি সার দিতে হবে। মাটি শুকিয়ে গেলে পানির ব্যবস্থা করতে হবে। হরমন হিসেবে ফ্লোরা, লিটোসেন ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে। শিম গাছের গোড়ায় মাটি দিয়ে একটু উচু করে রাখতে হবে যাতে পানি জমতে না পারে। সর্বদা গাছের গোড়া আগাছামুক্ত রাখতে হবে, চারা রোপনের ২-৩ সপ্তাহ পর পর মাদা প্রতি ৫০ গ্রাম করে ইউরিয়া ও পটাশ দিতে হবে। গাছের গোড়ার মাটি সর্বদা আগলা রাখতে হবে, গাছ মাচায় ওঠার আগে নিচে যে শাখা-প্রশাখা বের হয়, তা ছেটে দিতে হবে। মাচায় গাছ অনেক ঘন হয়ে গেলে পাতা ছেটে মাচা ফাঁকা করে দিয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। অনেকগুলো লতা এক সাথে জোড় নিলে তা আলাদা করে দিতে হবে।
পোকামাকড় ও রোগ বালাই ব্যবস্থাপনাঃ-(Insect and disease pest management)-
শিমের সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা হল ফল ছিদ্রকারী পোকা ও জাব পোকা। চারা অবস্থায় পাতা সুড়ঙ্গকারী এ পোকা মহা ক্ষতিকর। লাল ক্ষুদ্র মাকড়ষা ও অনেক সময় বেশ ক্ষতি করে থাকে, ফুল ফুটলে থ্রিপস ক্ষতি করতে পারে। ফল পেকে এলে বিন পড বাগ বা শিমের গান্ধি পোকা ক্ষতি করে। আইপিএম পদ্ধতি অনুসরণ করে এসব পোকামাকড় দমনের ব্যসস্থা নিতে হবে। শিমের সবচেয়ে মারাত্মক ২টি রোগ মোজেইক ও অ্যানথ্রাকনোজ।
ফলনঃ-(Yield)সঠিক ভাবে যতœ নিলে শতক প্রতি ৭০ থেকে ৮০ কেজি এবং হেক্টর প্রতি ১৫ থেকে ২০টন ফলন হতে পারে। শিমের ফুল ফোটার ২০-২৫ দিন পর ফসল সংগ্রহ করা যায়। ৪ মাসেরও বেশী সময় ধরে শিমের ফল পাওয়া যায়। শিমচাষে যে কোন সমস্যায় আপনি সরকারের জেলা ও উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে পরমর্শ গ্রহন করতে পারেন।
লেখক/Author
সাংবাদিক অমিতাব বর্মণ।
পীরগঞ্জ, রংপুর।
০৯/১২/২০২১ইং।
3 comments:
খুব সুন্দর
এ বিষয়ে বিস্তারিত লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
Very good.
Post a Comment