Sunday, January 9, 2022

লাউচাষ (Gourd cultivation) করে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করা সম্ভব !!

 


 ভুমিকা-(Introduction)বাংলাদেশের কৃষিতে কৃষকদের মাঝে লাউচাষ ধীরে ধীরে অত্যান্ত জনপ্রিয় ও অর্থকারি ফসলের তালিকায় চলে আসছে। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বানিজ্যিক ভাবে শত শত একর জমিতে হচ্ছে লাউচাষ। অল্প পুজিঁ বিনিয়োগ ও স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফা হওয়ায় শীত কালিন জনপ্রিয় এই সব্জীটি চাষাবাদে ঝুকছেন কৃষক। বাণিজ্যিক ভাবে লাউচাষ করে শুধু কৃষক গন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বীই নয়, এ সব্জীটির রয়েছে অসংখ্য পুষ্টি ও ঔষধি গুন। মজার ব্যাপার হচ্ছে এটি বাংঙ্গালীদের হরেক রকম খাবার ও রান্নার তালিকায় জনপ্রিয় একটি সব্জি। বাজারে এর চাহিদাও রয়ছে প্রচুর। বিভিন্ন প্রকারের রান্নায় এর রয়েছে বাহারি রকমের স্বাদ। বাংলাদেশ সরকারের কৃষি অধিদপ্তর ও কৃষি গবেষণা মুলক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আরও নতুন নতুন উন্নত জাতের হাইব্রিড জাতের উচ্চ ফলনশীল লাউ উদ্ভাবনে কাজ করা সহ কৃষি অধিদপ্তরের মাধ্যমে কৃষকদের কল্যাণে কৃষি প্রনোদনা ও পরামর্শ সেবা প্রদান করে আসছে।

লাউ গাছের বিবরন ও জীবনকাল-(Description and lifespan of gourd tree)-লাউ একটি লতা বা ডগা জাতীয় গাছ, লাউয়ের পাতা ও লতার রং সবুজ , এটির পাতা ও ডগা নরম হয়ে থাকে। এটির জীবনকাল ১শত ২০ থেকে ১শত ৪০দিন, ভাদ্র ও অশ্বিন মাসের মধ্যে রোপন করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। এটির পাতা, ডগা ও ফল সবই শাক ও সব্জি হিসেবে খাওয়া যায়। এটি শীত কালিন সব্জি হলেও বর্তমানে সারা বছরই চাষ হয়। লাউ সাধারনত লম্বা ও গোলাকার হয়ে থাকে।
লাউয়ের পুষ্টি/ঔষধী গুন- (The nutritional value of lau)-পুষ্টিবিদ ও বিভিন্ন প্রকার ভোজষ চিকিৎসা শাস্ত্র খেকে জানা যায়-লাউ শুধু একটি মজাদার ও জনপ্রিয় সব্জি নয়, এর রয়েছে অসংখ্য পুষ্টি ও ঔষধি গুন। যে কোন রান্নায় লাউ খেলে (১) ডায়াবেটিস রোগি, (২) জন্ডিস ও কিডনি রোগীর অত্যান্ত উপকার করে। (৩) লাউয়ে ৯৫ভাগ পানি থাকার কারনে মানুষের শরীরের পানি শুন্যতা রোধে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। (৪) রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে অত্যান্ত ভূমিকা রাখে। (৫) লাউতে দ্রবনীয় ফাইবার খাকায় খাদ্য হজমে শক্তিশালি ভূমিকা রাখে। (৬) লাউয়ের পাতার তরকারিতে খেলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন সহ মস্তিস্ক খান্ডা রাখে। (৭) লাউ নিয়মিত খেতে পারলে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে খুবই উপকারি। (৮) লাউ খেলে কোষ্ট কাঠিন্য ও এসিডিটি দুর করে। (৯) এটি হার্ডের রোগি ও মূত্রখলির সংক্রমনে যথেষ্ট ফলদায়ক। (৯) উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে কাজ করে। (১০) এটি নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখতে পারলে ত্বকের শ্রীবৃদ্ধিসহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অত্যান্ত ভূমিকা রাখে।
লাউচাষের পদ্ধতি-(Pumpkin cultivation method)-বাংলাদেশ কৃষি অধিদপ্তর ও কৃষি গবেষণা কেদ্রের তথ্যসূত্রে জানা যায়-অধিক ফলন ও মুনাফা পেতে হলে অবশ্যই আগাম জাতের উচ্চ ফলনশীল লাউচাষ করতে হবে। সেক্ষেত্রে উন্ত কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। (১) লাউচাষের জন্য অবশ্যই এ্যাটেল মাটি নির্বাচন করতে হবে। (২) লাউচাষের জন্য মাচা তৈরি করতে হবে, মাদার আকার (৩) লাউচাষে বীজ বা চারা রোপনের জন্য মাদা রি করতে হবে মাদা তেকে বেডের দুরত্ব হবে ২.৫মিটার, উচ্চতা হবে ১৫-২০ সেমিঃ। (৪) মাদা বা বেডের পাশ্বদিয়ে চসচের জন্য নালা রাখতে হবে। (৫) মাদায় সুস্থ্য স্ববল চারা বা বীজ বপন করতে হবে। (৬) বেডের উপরকে সর্বদা আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। (৭) (৮) নিয়মিত সেচসহ লাউগাছের গোড়ার মাটি আগলা বা নিরান দিতে হবে। (৯) অতিরিক্ত রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা যাবে না , পরিমিত সার প্রয়োগ করতে হবে। (১০) অধিক ফলন পেতে কৃষি অধিদপ্তরের পরােমর্শে ২ এবং ৩জি কাটিং পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।
সার প্রয়োগ পদ্ধতি-(Fertilizer application method)-নিম্ন লিখিত হারে হেক্টর প্রতি সার প্রয়োগ করতে হবেঃ- জমির ্চাউপরিভাগে- গোবর ১হাজার কেজী, ইউরিয়া ৫শত কেজী, টিএসপি ৮শত কেজী, এমপিও ৩শত কেজী ও বোরন ২কেজী। মাদার গর্তে প্রয়োগ-প্রতি গর্তের জন্য-১০কেজী সমুদয় গোবর, টিএসপি, এমপিও, বোরন ৫শত গ্রাম এবং ১/৫ অংশ ইউরিয়া পিট বা গর্তে ৪শত গ্রাম তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। বাকী এমপিও ৩শত গ্রাম ও ইউরিয়া ৪ কিস্তিতে বছরে প্রয়োগ করতে হভব।

অসংখ্য মজাদার রান্নায় লাউ-(Pumpkin in countless fun recipes)-জনপ্রিয় এ সব্জিটি নিম্নি বিত্ত থেকে মধ্য ও উচ্চ বিত্তশালী সকলের খাবারের তালিকায় রয়েছে। লাউ ঘন্টো, লাউ ডাল, লাউ চিংড়ি, ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে লাউ ইলিশ, লাউয়ের ছাল শুটকি, ছোটমাছ যেমন-পুটি, মোয়া, কটকি ও টাকি মাছ দিয়েও লাউয়ের মজাদার খাবার রান্না হয়। লাউয়ের ডাটা ও পাতাদিয়েও যে কোন মাছ রান্না করলে মজাদার হয়।
লাউচাষে উৎপাদন খরচ ও মুনাফা-(Production cost and profit in lau cultivation)-বাংলাদেশ কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে ১বিঘা (৫০ শতাংশ) জমিতে লাউচাষ করতে হলে কৃষকের উৎপাদন খরচ হবে প্রায় ২৫-৩০ হাজার টাকা। শীতকালে লাউ হেক্টর প্রতি ফলন হবে ৪০-৪৫ টন প্রায় এবং গ্রীষ্মকালে ১৮-২০টন প্রায়। শীতকালে আগাম ভাবে লাউচাষ করলে একটি লাউ বাজারে বিক্রি হয় ৪০-৫০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি ৫০ শতাংশ বিঘায় একজন কৃষক ১লক্ষ ৫০হাজার খেকে ৭০ হজার টাকার লাউ বিক্রি করতে পারবে। রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার রানীপুকুর এলাকার কৃষক মমতাজ মিয়া গত বছরে ৫০ শতাংশ জমিতে আগাম লাউচাষ করে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা মুনাফা করেছিলেন। এবারেরও তিনি ৫০ শতাংশের ২ বিঘা জমিতে আগাম লাউচাষ করেছেন। ফলনও হয়েছে বেশ ভাল, বর্তমানে তার চাষকৃত লাউ নিয়মিত বিক্রি অব্রাহত রয়েছে। এবারে তিনি ২লক্ষ ৫০হাজার টাকা মুনাফার আশা করছেন।

উপসংহার-(Conclusion)-রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান জানান- স্বল্প পুঁজি ও অল্প সময়ে (৩মাসে) অধিক মুনাফার জন্য বর্তমানে লাউচাষ একটি কৃষকের ভাগ্যউন্নয়নের চাবিকাটি। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় শত শত কৃষক শীতকালীন আগাম লাউচাষ করে স্বাবলম্বি হচ্ছেন। বানিজ্যিক ভাবে লাউচাষ করতে হলে অবশ্যই সরকারের নিয়োগকৃত স্থানীয় কৃষিবিদ বা কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শ নিলে কৃষকের উৎপাদন খরচ অনেকাংশে কম হওয়াসহ অধিক মুনাফা আয় করবে।

লেখক-(Author)-
সাংবাদিক অমিতাব বর্মণ।
ভেন্ডাবাড়ী, পীরগঞ্জ-রংপুর।
বাংলাদেশ।
০৯/০১/২০২২ইং, রবিবার।