Monday, February 14, 2022

তেঁতুল গাছ (Tamarind tree) প্রায় বিলুপ্তির পথে !!


তেঁতুল গাছ
(
Tamarind tree)-প্রাচীন কাল খেকেই বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলসহ শহরের বাসা/বাড়ীর পতিত জমি, ঝোপ, বাঁশ ঝাড়, আম কাঠালের বাগানসহ বিভিন্ন স্থানে দেখাযেত বড় বড় তেঁতুলের গাছ। কিন্ত বর্তমানে প্রায় ১যুগের মধ্যে তা আর চোখেই পড়েনা! কালের বিবর্তনে পরিবেশ ও মানব জাতির কল্যানকর মূল্যবান এ ভোজষ গাছটি আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে।
তেঁতুল গাছের বিবরন-(Description of tamarind tree)-বিভিন্ন উদ্ভিদ ভিত্তিক পুথি বা গ্রন্থ থেকে জানা যায়- জন্মগত ভাবেই তেঁতুল গাছ একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় গাছ। এটি আফ্রিকা অঞ্চলীয় জাম্বিয়া, ক্যামেরুন, তানজানিয়া, সুদানসহ আরও কয়েকটি বনাঞ্চলে এর ব্যাপক ভাবে দেখা যেত। তেঁতুলগাছ একটি সুদৃশ্য চির সবুজ বৃক্ষ। প্রচুর শাখা প্রশাখাসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাতায় ভরপুর থাকে এ গাছ। পাতার ঘনত্বের কারনে গাছের মুল কান্ডে বা দেহে চাঁদ ও সূর্যালো প্রবেশ করতে পারেনা। এমন কি এ গাছের ডাল বা কান্ডে বসে থাকলে মাটি থেকে দেখাই দুঃসাধ্য হয়ে যায়। ফলে দিনে দুপুরেই এ গাছটিতে উঠলেও অন্ধকারাছন্ন দেখা যায়। আর তাইতো এ গাছটিকে গ্রাম্য প্রবাদে ভূতরে গাছ বলা হয়ে থাকে। এটি একটি দীর্ঘজীবি গাছ, নানান প্রতিকুলতার আবহাওয়ায় এটি বেঁচে খাকতে পারে। এ গাছটির কান্ড ও গুল অত্যান্ত শক্ত হয়ে থাকে, এ গাছের শেকড় অনেক বিস্তৃত থাকে, ফলে এটি ঝড়-বাতাশে সহজে ভেঙ্গে ও উপড়ে পড়েনা।
তেঁতুলের জাত-(Tamarind variety)-তেঁতুলের জাত প্রাচীন কাল থেকেই আমরা এক প্রকারের খেয়ে বা দেখে আসছি। এটির অনুমোদিত একাধিক কোন জাত নেই। তেঁতুল ফল কাঁচা বা পাঁকা দুটোই স্বাদে অত্যান্ত টক। এটি কাঁচাপাাঁকা দুভাবেই খাওয়া যায়। তবে আশার কথা হচ্ছে, বর্তমানে সরকারি ও বে-সরকারিভাবে মিষ্টি তেঁতুলের জাত নিয়ে গবেষনা ছলছে।
তেঁতুল ফুল ও ফলের মৌসুম-(Tamarind flower and fruit season)- জৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসে তেঁতুল গাছের ফুল আসে, ফুলের পাঁপড়ি থাকে পাঁচটি, ফুলের রং হালকা বাদামি হয়ে থাকে, মৌমাছি, মাছি জাতীয় পতঙ্গ দ্বারা এর পরাগয়ন ঘটে থাকে। এর ফল একেকটি ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে থাকে। ফলটি বেশিরভাগ কাস্তের ন্যায় বাঁকা হয়ে থাকে, আবার কিছু কিছু ফল সোজাও হয়ে থাকে। এ ফলটি গাছের শাখা প্রশাখায় থোকা থোকায় ধরে। ফাল্গুন ও চৈত্রমাসে এর ফল পেকে যায়।


তেঁতুল ফল ও গাছের উপকারিতা-
(Benefits of tamarind fruit and tree)-
বিভিন্ন চিকিৎসা শাস্ত্র সূত্রে জানা যায়-তেঁতুল মানব জীবনের অসংখ্য ভোজষের কাজ করে থাকে। যেমন-(১) তেঁতুলে হজম শক্তি বৃদ্ধিসহ কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করে। সেই সাথে তেঁতুলের পাতার রস ডায়রিয়ায় যথেষ্ট উপকারি। (২) তেঁতুল ফলের বিচি গুড়ো করে নিয়মিত খেলে ডায়াবেটিস রোগিদের ইন্স্যুলেনের উপকার করে। (৩) প্রতিদিন পিরিমিত পরিমানে তেঁতুল খেলে ইহা শরীরের যে কোন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। সেই সাথে কিডনি সুস্থ্য ও সবল রাখে। (৪) তেঁতুল পাতার রসে অতিরিক্ত মাদকাশক্তদের ডেম্যাজড্ লিভারের উপকার করে, সাথে যকৃতের ভীষন উপকার করে। (৫) তেঁতুল বীজের গুড়ো খেলে পেপটিক আলসার থেকে দ্রুত নিরাময় লাভ করা যায়। (৬) নিয়মিত পরিমিত তেঁতুল খেলে অতিরিক্ত মেদ ও ফ্যাট রোগিদের আশানুরুপ উপকার পাওয়া যায়। (৭) উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ও মাত্রাতিরিক্ত নেশার নেশা কাটতেও ফলপ্রসূ কাজ করে। (৮) তেঁতুল গাছের ছাল ও পাতার রস শরীরের যে কোন ক্ষত সারাতে অগ্রনি ভূমিকা পালন করে। কারন এতে রয়েছে অ্যান্টি সেপটিক ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়া রোধক গুন। (৯) নিয়মিত পরিমিত তেঁতুল খেলে শরীরের ভিটামিন সির ঘাটতি পূরনসহ সর্দিকাশি প্রতিরোধ করে। (১০) নিয়মিত পরিমিত তেঁতুল খেলে নারিী/পুরুষের ত্বক উজ্জল রাখে। (১১) তেঁতুল পাতার রস খেলে পাইলস, প্রসাব সহ হাত ও পায়ের জ্বালাপোড়ায় আশানুরুপ ফল পাওয়া যায়। (১২) হার্ডের রোগিদের জন্য তেঁতুল কুবই উপকারি। (১৩) কৃমিনাশকে তেঁতুল পাতার রস অত্যান্ত ফলদায়ক। (১৪) গর্ভবতী মহিলাদের বমি বমি ভাব দুরিকরনে ইহা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। (১৫) তেঁতুলে ক্যালসিয়াসমর অভাব দুর করে। (১৬) এটি বাত ও জয়েন্টের ব্যাথায় যথেষ্ঠ ফলদায়ক কাজ করে। ‍(১৭) তেঁতুল পাতার রস খেলে জন্ডিস রোগ ভাল হয়। (১৮) তেঁতুল খেলে শরীরের কনিজ পদার্থের অভাব দুর করে। (১৯) তেঁতুল পাতার রস দিয়ে চা খেলে ম্যালেরিয়া জ্বর ভাল হয়। (২০) তেঁতুলে শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে যায়। তেঁতুলের আঁচার নারী/পুরুষের নিকট একটি জনপ্রিয় খাবার, তবে ভরাপেটে খেলে সব থেকে বেশী উপকার পাওয়া যায়।
তেঁতুল ফলের অপকারিতা-(Disadvantages of tamarind fruit)-তেঁতুলে যেমন মানব জীবনে অসংখ্য রোগের উপকার করে তেমনি মাত্রাতিরিক্ত খেলে আবার শরীরের নানাবিদ সমস্যারও সৃষ্টি হতে পারে। যেমন-(১) তেঁতুল বা তেঁতুলের আঁচার মাত্রাতিরিক্ত সেবন করলে, এলার্জির , চুলকানি পাচড়া, বমি বমিভাবসহ স্বসকষ্ট রোগিদের পার্শপ্রতিক্রিয়া দেখাদিতে পারে। (২) দন্তরোগিদের ক্ষেত্রে (৩) পিত্তথলিতে পাথর সৃষ্টিতে সহযোগিতা (৪) শরীরে এসিড রিফ্লাক্স বৃদ্ধি (৫) রক্তের সিরাম গ্লুকোজ বৃদ্ধি (৬) রক্ত নালীকে সংকোচন করাসহ রক্ত প্রবাহের ধারার গতি কমাতে পারে। সেই সাথে (৭) যেনারা অ্যাসপিরিন, ইবুপ্রেফেন, ন্যাপ্রেক্সিন এর মত নন স্টেরয়ডাল অ্যান্টিইনফ্লামেটরি ড্রাগ গ্রহন করে থাকেন, তাদের জন্য মারাক্তক পার্শপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
বাংলাদেশে তেঁতুল চাষের এলাকা-(Areas of tamarind cultivation in Bangladesh)-প্রাচীন কাল থেকে দেখা যায় বাংলাদেশের বন জঙ্গঁল, রাস্তার ধার, বাসা/বাড়ীর পতিত জমিতে পাখির মাধ্যমে তেঁতুল বীজ পড়ে গাছ জন্মে থাকে। কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে এ গাছ রোপন করেনা। তবে ক্লোফট গ্রাফ কাটিয়ের মাধ্যমেও এর চারা তৈরি করা যায। গ্রাফটিং চারার মাধ্যমে অল্প সময়েই মানসম্মত ফলন পাওয়া সম্ভব। বংলাদেশের সব ধরনের মাটিতেই এর চাষ করা সম্ভম। তবে আশানুরুভাবে বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া ও গাজীপুর জেলায় এ গাছটিকে জন্মিতে দেখা যায়।
তেঁতুল গাছ দ্রুত বিলুপ্তির কারন-(The reason for the rapid extinction of tamarind trees)-তেঁতুল গাছের খড়ি অন্যান্য জ্বালানি কাঠের চেয়ে অধিক পরিমানে জ্বলে এবং এর আগুনের দম অকনক বেশী থাকে। এ কারনে দেশের বিভিন্ন এলাকার ইটভাটা মালিকসহ বড় বড় কনফেকশনারির মালিকগন সাধারন জ্বালনি কাঠের চেয়ে তেঁতুল গাছের কাঠকেই অধিক অর্থদিয়ে ক্রয় করে থাকেন। অধিক অর্থের লোভে গ্রামাঞ্চলের তেঁতুল গাছের মালিকগন শতবর্ষী তেঁতুল গাছসহ মাঝাড়ি সাইজের তেঁতুলগাছ বিক্রি করে সাবাড় করে ফেলেছেন। ফলে দিন দিন প্রকৃতি ও মানব কল্যাণকর এ গাছটি বর্তমানে বিলুপ্ত হতে বসেছে ।

লেখক/Author
অমিতাব বর্মণ।
ভেন্ডাবাড়ী, পীরগঞ্জ-রংপুর।
১৪/০২/২০২২ইং।
Thank you for reading this article please shear this and srprot my websites to grow futher.

Monday, January 24, 2022

খেজুর গাছ (Palm/date trees) হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতি থেকে !

ভূমিকা-(Introduction)- প্রকৃতির অনন্য ঐতিহ্য দেশী বা জংলী খেজুরের গাছ কালের বিবর্তনে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে প্রকৃতির মানচিত্র থেকে। গ্রামীন জনপদের রাস্তাঘাটের অপরুপ শোভাবর্ধণ কারি এ গাছটি শুধু কি শোভা বর্ধণ করতো ? না এটি শীতকালে গ্রামীন অর্থনীতিতে যৎসামান্য অর্থনৈতিক ভূমিকাসহ চাহিদা মেটায় অতুলনীয় স্বাদের রস এবং মূল্যবান খেজুর গুড়ের। কয়েক বছর আগেই গ্রাম বাংলার মেঠো পথের দু ধারে অহরহ সারিবদ্ধ ভাবে শোভা পেত দৃষ্টিনন্দন এ গাছটি। বর্তমানে তা খুজে পাওয়া দায়, তবে কিছু এলাকায় গাছ প্রেমি মানুষের উদ্দেগে দু-একটি এলাকায় নতুন করে শোভা পেতে দেখা যাচ্ছে  এ গাছটিকে। 

খেজুর গাছের বিবরন-(Description of date/palm tree)-বাংলাদেশে সাধারনত খেজুর গাছ সাধারনত দু-ধরনের দেখতে পাওয়া যায়- (১) দেশী বা জংলী খেজুর (Desi or wild dates) , (২) আরবি বা সৌদি খেজুর (Arabic or Saudi dates)উদ্ভিদ তথ্য গ্রন্থাগার থেকে জানা যায় খেজুর গাছ এ্যারিকেসি গনভুক্ত (The Phoenix genus of the Ericaceae family)। বিশ্বে মোট ১৪ প্রজাতীর এ ধরনের গাছ রয়েছে। এ সবের মধ্যে দেশী বা জংলী এবং সৌদি খেজুর এ দু ধরনের খেজুর গাছেই রস ও সুস্বাদু ফলের জন্য বিখ্যাত। এটি একটি এক জীব পত্রী বা একলিঙ্গ বিশিষ্ট বৃক্ষ। দেশী খেজুর বেশ দ্রুত বর্ধনশীল শাখাবিহীন এক কান্ড বিশিষ্ট গাছ। এটি নারিকেল, তাল, সুপারী গাছের ন্যায় জন্মে, গ্রীষ্মকালে এর ফল পাওয়া যায়।

জন্ম ও উৎপত্তি -(Birth and origin)-বংলাদেশের সবে এলাকাতেই জন্মে দেশী বা জংলী খেজুর গাছ। ইহা ছাড়া এটি বিশেষ করে হিমালয়ের পশ্চিোংশ থেকে পূর্ব এশিয়ার ভারতবর্ষ, নেপাল ও মিয়ানমারের আবহাওয়া বিশেষ উপযেগি। বাংলাদেশের বিখ্যাত সুন্দর বনসহ উপকূলীয় অঞ্চল গুলোতে দেখা যায় এর বংশবিস্তার। প্রধানত প্রাকৃতিক ভাবেই এ দেশী খেজুরগাছ জন্মে থাকে, মূলত কাঠবিড়ালী ও বিভিন্ন প্রজাতির পাখিরাই এর বিস্তারক।

বাংলাদেশের গ্রামীন অর্থনীতি ও প্রকৃতিতে দেশী খেজুরের গুরুত্ব-(The importance of native dates in the rural economy and nature of Bangladesh)- বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে সৌদি খেজুরের চাষ হলেও দেশী বা জংলী খেজুরের বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়না। তবে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও গ্রামীন অর্থনৈতিতে প্রাচীনকাল থেকেই দেশী খেজুরের গাছ যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে আসছে। এ দেশের প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চলের গাছী সম্প্রদায় অর্থাৎ (যারা খেজুর গাছ খেখক রস সংগ্রহ করে তাদেরকেই বলা হয় গাছী )। শীত মৌসুমে খেজুুরের রস সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। সেই সংগ্রহকৃত রস প্রতিদিন প্রত্যুষে ভোর বেলা খেকে সকাল ১০টার মধ্যে গ্রামে গ্রামে অথবা গ্রামাঞ্চলের হা-বাজার গুলোতে কলস বা হাড়ি ভরে ভারে করে কেজী বা গ্লাস দরে বিক্রি করে থাকে। এ রস অত্যান্ত সুস্বাদু ও জনপ্রিয়। শীতের সকালে খেজুর রস পান না করলে অনেকের চলবেই না। টাটকা রস বিক্রির পর অবিক্রিত রসদিয়ে গাছীরােই তৈরী করেন খেজুর গুর। এই গাছী সম্প্রদায়ের লোকজনই গ্রামাঞ্চলের রাস্তার দুপার্শে সারিবদ্ধ ভাবে খেজুর গাছ লাগিয়ে থাকেন। পাশাপাশী কিছু গাছ প্রেমী মানুষও অনেক ক্ষেত্রে পতিত জমিসহ জমির আইলে এ গাছ লাগিয়ে থাকেন।

খেজুর গুড়ের বাহারী খাদ্য তালিকা-(External food list of date molasses)-খেজুর রসের গুড় দিয়ে এ দেশের বাঙ্গালীদের জন্য শত শত বছর ধরে বাহারী সুস্বাদু খাবারের ঐতিহ্য বহন করে আসছে। আখের গুড় ১শত ২০ থেকে ৫গ টকা কেজী বিক্রি হলেও খেজুর গুড় বিক্রি হয় ২শত ৫০ থেকে ৩শত টাকা। খেজুর গুড়দিয়ে বিভিন্ন নামীদামী মিস্টির দোকানে তৈরী করা হয়-উচ্চ মূল্যের রসগোল্লা, জিলাপি, সন্দেস, খেজুর গুড়ছানা, খেজুর গুড়মিঠাই, পিঠা-পায়েস ইত্যাদি। শুধু কি তাই ? এ দেশে বসবাস রত বিভিন্ন উপজাতি সম্প্রদায় বা গোষ্টি খেজুরের রস দিয়ে তৈরি করে থাকেন-উচ্চ মূল্যের চোলাই মদসহ বিয়ার ।

খেজুর গাছের গৃহস্থলি ব্যবহার-(Household use of date palms)-থেজুর গাছ দিয়ে গ্রামাঞ্চলের মানুষ প্রাচীন কাল থেকে ঘরের বর্গা, ঘরের ছাদের বিছানিসহ ছোট খাল বা নালা পারাপারের জন্য মানুষ ও মালামাল বহনকারি ঠেলাগাড়ী পারাপারের জন্য খেজুর গাছের গুল ব্যবহার করা হত। বর্তমানে এ গাছের গুল অত্যান্ত মজবুত হওয়ায় টিনের ঘরের মুল্যবান রুয়া, বাতা হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এ গাছের গাছের কাঠের বৈশিষ্ট সহজে ঘুন পোকা আক্রমন করতে পারেনা। ইহাছাড়াও খেজুর গাছের পাতা দিয়ে গ্রামাঞ্চলে পাটি, মাদুর, ঝুড়ি, হাতব্যাগ, ফুলদানিসহ ইত্যাদি কারুপন্য তৈরি করা হয়।

খেজুর গাছ বিলুুপ্তের কারন-(The reason for the extinction of native date palms)-প্রাচীন কাল থেকে শহর খেকে শুরু করে প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চলের রাস্তার দুধারে পুকুর পাড়ে, পতিত জমি, জমির আইলে, বাড়ীর উঠানসহ অহরহ শোভা পাইত এই প্রকৃতির শোভা বর্ধনকারি খেজুর গাছ। কিন্তু বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও রাস্তা ঘাটের উন্নয়নের যাতাকলে রাস্তা প্রসস্ত করন সহ ব্যাপক হারে বাসাবাড়ী নির্মানে জায়গার সংকুলানে এ সমস্ত গাছ কেটে ফেলতে হয়েছে। কিন্তু নতুন করে আর এ গাছ লগোনো হয়নি। পাশাপাশি ইট ভাটায় খড়ির চাহিদা মেটাতেও এর ব্যবহার ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দিন দিন বিলুপ্ত হতে বসেছে এ খেজুর গাছ।

বাংলাদেশে খেরর রস ও খেজুর গুড় উৎপানের বিখ্যাত এলাকা সমুহ-(Famous areas for production of Kherr juice and date molasses in Bangladesh)- এ দেশের জলবায়ুর কারনে বাংলাদেশের বিষেশ করে ফরিদপুর, নাটোর, রাজশাহী ও যশোর জেলায় তুলনামুলক ভাবে বেশী দেখা যায় এ গাছটিকে। বাংলাদেশ কৃষি সমপ্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়- ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরকারি ভাবে উদ্যোগ নিয়ে দেশী খেজুর গাছ সংরক্ষন ও সম্প্রসারনে উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে।

উপসংহার (Conclusion)(Conclusion)-দেশের সচেতন মহল ও পরিবেশ বাদিরা বিভিন্ন মতবাদে এ গাছটিকে সংরক্ষনে সরকারি ভাবে জোড়ালো পদক্ষেপ গ্রহন করে শুধুমাত্র দেশের গ্রামীন রাস্তা গুলোর দুধারে শারিবব্ধ ভাবে চারা রোপনের উদ্যাগ নিলে খেজুর গুড়ের দেশর চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে এ সুস্বাদু গুড় রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করা সম্ভব।

লেখক/Author

সাংবাদিক অমিতাব বর্মণ।

ভেন্ডাবাড়ী, পীরগঞ্জ-রংপুর।

বাংলাদেশ।


Sunday, January 9, 2022

লাউচাষ (Gourd cultivation) করে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করা সম্ভব !!

 


 ভুমিকা-(Introduction)বাংলাদেশের কৃষিতে কৃষকদের মাঝে লাউচাষ ধীরে ধীরে অত্যান্ত জনপ্রিয় ও অর্থকারি ফসলের তালিকায় চলে আসছে। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বানিজ্যিক ভাবে শত শত একর জমিতে হচ্ছে লাউচাষ। অল্প পুজিঁ বিনিয়োগ ও স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফা হওয়ায় শীত কালিন জনপ্রিয় এই সব্জীটি চাষাবাদে ঝুকছেন কৃষক। বাণিজ্যিক ভাবে লাউচাষ করে শুধু কৃষক গন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বীই নয়, এ সব্জীটির রয়েছে অসংখ্য পুষ্টি ও ঔষধি গুন। মজার ব্যাপার হচ্ছে এটি বাংঙ্গালীদের হরেক রকম খাবার ও রান্নার তালিকায় জনপ্রিয় একটি সব্জি। বাজারে এর চাহিদাও রয়ছে প্রচুর। বিভিন্ন প্রকারের রান্নায় এর রয়েছে বাহারি রকমের স্বাদ। বাংলাদেশ সরকারের কৃষি অধিদপ্তর ও কৃষি গবেষণা মুলক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আরও নতুন নতুন উন্নত জাতের হাইব্রিড জাতের উচ্চ ফলনশীল লাউ উদ্ভাবনে কাজ করা সহ কৃষি অধিদপ্তরের মাধ্যমে কৃষকদের কল্যাণে কৃষি প্রনোদনা ও পরামর্শ সেবা প্রদান করে আসছে।

লাউ গাছের বিবরন ও জীবনকাল-(Description and lifespan of gourd tree)-লাউ একটি লতা বা ডগা জাতীয় গাছ, লাউয়ের পাতা ও লতার রং সবুজ , এটির পাতা ও ডগা নরম হয়ে থাকে। এটির জীবনকাল ১শত ২০ থেকে ১শত ৪০দিন, ভাদ্র ও অশ্বিন মাসের মধ্যে রোপন করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। এটির পাতা, ডগা ও ফল সবই শাক ও সব্জি হিসেবে খাওয়া যায়। এটি শীত কালিন সব্জি হলেও বর্তমানে সারা বছরই চাষ হয়। লাউ সাধারনত লম্বা ও গোলাকার হয়ে থাকে।
লাউয়ের পুষ্টি/ঔষধী গুন- (The nutritional value of lau)-পুষ্টিবিদ ও বিভিন্ন প্রকার ভোজষ চিকিৎসা শাস্ত্র খেকে জানা যায়-লাউ শুধু একটি মজাদার ও জনপ্রিয় সব্জি নয়, এর রয়েছে অসংখ্য পুষ্টি ও ঔষধি গুন। যে কোন রান্নায় লাউ খেলে (১) ডায়াবেটিস রোগি, (২) জন্ডিস ও কিডনি রোগীর অত্যান্ত উপকার করে। (৩) লাউয়ে ৯৫ভাগ পানি থাকার কারনে মানুষের শরীরের পানি শুন্যতা রোধে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। (৪) রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে অত্যান্ত ভূমিকা রাখে। (৫) লাউতে দ্রবনীয় ফাইবার খাকায় খাদ্য হজমে শক্তিশালি ভূমিকা রাখে। (৬) লাউয়ের পাতার তরকারিতে খেলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন সহ মস্তিস্ক খান্ডা রাখে। (৭) লাউ নিয়মিত খেতে পারলে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে খুবই উপকারি। (৮) লাউ খেলে কোষ্ট কাঠিন্য ও এসিডিটি দুর করে। (৯) এটি হার্ডের রোগি ও মূত্রখলির সংক্রমনে যথেষ্ট ফলদায়ক। (৯) উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে কাজ করে। (১০) এটি নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখতে পারলে ত্বকের শ্রীবৃদ্ধিসহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অত্যান্ত ভূমিকা রাখে।
লাউচাষের পদ্ধতি-(Pumpkin cultivation method)-বাংলাদেশ কৃষি অধিদপ্তর ও কৃষি গবেষণা কেদ্রের তথ্যসূত্রে জানা যায়-অধিক ফলন ও মুনাফা পেতে হলে অবশ্যই আগাম জাতের উচ্চ ফলনশীল লাউচাষ করতে হবে। সেক্ষেত্রে উন্ত কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। (১) লাউচাষের জন্য অবশ্যই এ্যাটেল মাটি নির্বাচন করতে হবে। (২) লাউচাষের জন্য মাচা তৈরি করতে হবে, মাদার আকার (৩) লাউচাষে বীজ বা চারা রোপনের জন্য মাদা রি করতে হবে মাদা তেকে বেডের দুরত্ব হবে ২.৫মিটার, উচ্চতা হবে ১৫-২০ সেমিঃ। (৪) মাদা বা বেডের পাশ্বদিয়ে চসচের জন্য নালা রাখতে হবে। (৫) মাদায় সুস্থ্য স্ববল চারা বা বীজ বপন করতে হবে। (৬) বেডের উপরকে সর্বদা আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। (৭) (৮) নিয়মিত সেচসহ লাউগাছের গোড়ার মাটি আগলা বা নিরান দিতে হবে। (৯) অতিরিক্ত রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা যাবে না , পরিমিত সার প্রয়োগ করতে হবে। (১০) অধিক ফলন পেতে কৃষি অধিদপ্তরের পরােমর্শে ২ এবং ৩জি কাটিং পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।
সার প্রয়োগ পদ্ধতি-(Fertilizer application method)-নিম্ন লিখিত হারে হেক্টর প্রতি সার প্রয়োগ করতে হবেঃ- জমির ্চাউপরিভাগে- গোবর ১হাজার কেজী, ইউরিয়া ৫শত কেজী, টিএসপি ৮শত কেজী, এমপিও ৩শত কেজী ও বোরন ২কেজী। মাদার গর্তে প্রয়োগ-প্রতি গর্তের জন্য-১০কেজী সমুদয় গোবর, টিএসপি, এমপিও, বোরন ৫শত গ্রাম এবং ১/৫ অংশ ইউরিয়া পিট বা গর্তে ৪শত গ্রাম তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। বাকী এমপিও ৩শত গ্রাম ও ইউরিয়া ৪ কিস্তিতে বছরে প্রয়োগ করতে হভব।

অসংখ্য মজাদার রান্নায় লাউ-(Pumpkin in countless fun recipes)-জনপ্রিয় এ সব্জিটি নিম্নি বিত্ত থেকে মধ্য ও উচ্চ বিত্তশালী সকলের খাবারের তালিকায় রয়েছে। লাউ ঘন্টো, লাউ ডাল, লাউ চিংড়ি, ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে লাউ ইলিশ, লাউয়ের ছাল শুটকি, ছোটমাছ যেমন-পুটি, মোয়া, কটকি ও টাকি মাছ দিয়েও লাউয়ের মজাদার খাবার রান্না হয়। লাউয়ের ডাটা ও পাতাদিয়েও যে কোন মাছ রান্না করলে মজাদার হয়।
লাউচাষে উৎপাদন খরচ ও মুনাফা-(Production cost and profit in lau cultivation)-বাংলাদেশ কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে ১বিঘা (৫০ শতাংশ) জমিতে লাউচাষ করতে হলে কৃষকের উৎপাদন খরচ হবে প্রায় ২৫-৩০ হাজার টাকা। শীতকালে লাউ হেক্টর প্রতি ফলন হবে ৪০-৪৫ টন প্রায় এবং গ্রীষ্মকালে ১৮-২০টন প্রায়। শীতকালে আগাম ভাবে লাউচাষ করলে একটি লাউ বাজারে বিক্রি হয় ৪০-৫০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি ৫০ শতাংশ বিঘায় একজন কৃষক ১লক্ষ ৫০হাজার খেকে ৭০ হজার টাকার লাউ বিক্রি করতে পারবে। রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার রানীপুকুর এলাকার কৃষক মমতাজ মিয়া গত বছরে ৫০ শতাংশ জমিতে আগাম লাউচাষ করে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা মুনাফা করেছিলেন। এবারেরও তিনি ৫০ শতাংশের ২ বিঘা জমিতে আগাম লাউচাষ করেছেন। ফলনও হয়েছে বেশ ভাল, বর্তমানে তার চাষকৃত লাউ নিয়মিত বিক্রি অব্রাহত রয়েছে। এবারে তিনি ২লক্ষ ৫০হাজার টাকা মুনাফার আশা করছেন।

উপসংহার-(Conclusion)-রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান জানান- স্বল্প পুঁজি ও অল্প সময়ে (৩মাসে) অধিক মুনাফার জন্য বর্তমানে লাউচাষ একটি কৃষকের ভাগ্যউন্নয়নের চাবিকাটি। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় শত শত কৃষক শীতকালীন আগাম লাউচাষ করে স্বাবলম্বি হচ্ছেন। বানিজ্যিক ভাবে লাউচাষ করতে হলে অবশ্যই সরকারের নিয়োগকৃত স্থানীয় কৃষিবিদ বা কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শ নিলে কৃষকের উৎপাদন খরচ অনেকাংশে কম হওয়াসহ অধিক মুনাফা আয় করবে।

লেখক-(Author)-
সাংবাদিক অমিতাব বর্মণ।
ভেন্ডাবাড়ী, পীরগঞ্জ-রংপুর।
বাংলাদেশ।
০৯/০১/২০২২ইং, রবিবার।

Sunday, January 2, 2022

Privacy polecy

Contact Me

 plese join our facebook group to contact wish me.

About Me

 

I am journalist Amitab Bormon-(amitabbdbangla.blogspot.com)-Through this blog, I would like to highlight the right direction of healthcare through human nature, lost heritage, ethnic and religious practices, education, culture, agro-economy, technology, entrepreneurship , humanity, achievements, creative discoveries and the unique qualities of plant life. In this case, I hope to follow the blog with all your suggestions, prayers. Good luck
to all.

Saturday, December 25, 2021

আকন্দ গাছের (Akand tree) রয়েছে অফুরান্ত ভোজষ/ঔষধি গুন !!

আকন্দ গাছের পরিচিতিঃ- (Introduction to Akand tree)-প্রচীনকালে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার ডোবা, নালা, নদীর পাড়সহ ঝোপ-জঙ্গলে অযত্ন ও অবহেলায় বেড়ে উঠতে দেখা গেলেও বর্তমানে তা খুজে পাওয়া দায়। এটি একটি ঝোপ জাতীয় গুল্ম উদ্ভিদ গাছ, এর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে-(Calotropis Gigantea. C. Procera.)।  এ গাছটির রয়েছে অফুরান্ত ভেজষ/ঔষধি গুন। 

আকন্দ গাছের গঠন ও আকৃতিঃ- (Structure and shape of Akanda tree)- এ গাছটি ৮-১০ ফুট উচু হয়ে থাকে। সাধারনত  আকন্দ।  শ্বেত আকন্দের ফুলের রং সাদা এবং লাল আকন্দের ফুলের রং বেগুনি হয়ে থাকে। গাছের ছালের রং ধূসর বর্নের হয়ে থাকে,এর পাতা ৬-৮ইঞ্চি লম্বা হয়। এর শাখা প্রশাখা ভেঙ্গে গেলে ধুধের ন্যায় সাদা আঠা বের হয়। এ গাছে ফুল ফুঠলে দেখতে অপরুপ লাগে, ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্য এ গাছে ফুল ফোটে এবং জুনের মাঝা-মাঝিতে ফল হয়।  আগষ্ট থেকে নভেম্বরের মধ্য এর ফল পেকে যায়। 

আকন্দ গাছের ব্যবহারঃ-(Use of Akand tree)- বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ ও ভোজষ শাস্ত্র থেকে জানা যায়-প্রাচীনকালে গ্রামাঞ্চলের বৈদ্য/কবিরাজ গন আকন্দের গাছের ছাল, আঠা, শেকড় ও পাতাদিয়ে বেশকিছু জটিল এবং কঠিন রোগের উৎকৃষ্ট মানের চিকিৎসা দেয়াহত। বর্তমানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আয়ুর্বেদীক ও ইউনানী শাস্ত্রে এর ব্যবহার ব্যপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

আকন্দ গাছ বানিজ্যিক ভাবে চাষঃ-(Akand trees are cultivated commercially)- বাংলাদেশ কৃষি ও উদ্ভিদ গবেশনা দপ্তরের সূত্রমতে জানা যায়-বর্তমানে দেশের বেশ কয়েকটি আয়ুর্বেদীক ও ইউনানি ঔষধ কোম্পানী নিজেদের ব্যবহারের জন্য নিজস্ব জমিতে বানিজ্যিক ভাবে আকন্দ গাছের চাষাবাদ শুরু করেছেন। সেই সাথে সাধারন কৃষকদেরও এটি বানিজ্যিক ভাবে চাষাবাতদর জন্য উদ্বুদ্ধ করছেন। তবে কিছু কিছু নার্সারিতে ইতিমধ্যে বানিজ্যিক চাষাবাদ শুরু করেছে। এটি বানিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ করলে একর প্রতি ১লক্ষ থেকে ১লক্ষ ৩০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। কারন বর্তমানে ঔষধ কোম্পানি গুলোতে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

আকন্দ গাছের বীজ ও চাষাবাদঃ-(Akand tree seeds and cultivation-)- অন্যান্য উদ্ভিদ গাছের থেকে আকন্দ গাছের সহসায় দ্রুত বংশ বিস্তার করা সম্ভব। কারন এর শুধু ফল খেকেই বীজ হয় না, এর শেকর, মোথা, সাকা প্রসাকার অংশ থেকেও বংশ বিস্তার করে। ৩-৪ ফিট দুরত্বে এর চারা লাগিয়ে এর চাষ করা যায়। এটি চাষে তেমন কোন রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না। এটির ছাল/বাকল, পাতা, আঠা, শেকর, মোথা সব কিছুই ঔষধি।

আকন্দ গাছের প্রাপ্তিস্থানঃ-(Receipt of acacia tree)- আকন্দ গাছ শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারত, চীন, পাকিস্থান, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা, ফিলিপাইন ও মালোশিয়াতেও দেখতে পাওয়া যায়।

আকন্দ গাছের ঔষধি গুন ও ব্যবহার বিধিঃ-(Medicinal properties and rules of use of Akand tree)- (১) আকন্দ  গাছের শিকরের ছাল গুড়াকরে আকন্দের আঠায় ভিজিয়ে ভলেভাবে শুকিয়ে চুরুট বানিয়ে ধূমপান করলে শ্বাসকষ্ঠের অসম্ভব উপকার পাওয়া যায়। (২) ০.৬৫ গ্রাম পরিমান আকন্দের পাতার পোড়াঁছাই পানিতে মিশিয়ে পান করলে গুরুতর এসিডিটি খেকে দ্রুত উপশম পাওয়া যায়। (৩) আকন্দ গাছের ২০-৩০গ্রাম আঠার সাথে ৩ গ্রাম শুকনো হলুদের গুড়ো মিশিয়ে তুলাদিয়ে নিয়মিত কয়েকদিন ছুঁলি বা মেঁছতায় লাগালে চিরতরের তা ভাল হবে। (৪) শরীরের চুলকানি ও পাচড়ায় পরিমানমত আকন্দের আঠা ও সহপরিমান তিলের তেল এবং হলুদের গুড়োর অর্ধেক পরিমানে মিশিয়ে মলম তৈরি করে নিয়মিত ঘুমানোর আগে লাগালে কয়েকদি লাগালে দ্রুত উপশম পাওয়া যাবে, (৫) কানের ভিতরের ক্ষতজনিত যন্ত্রনায় আকন্দের পাতার দুপাশে পুরোনো ঘি মাখিয়ে তা আগুনে ভালভাবে সেঁকদিয়ে সেই ঘি নিংড়েনিয়ে কানেদিয়ে তুলাদ্বারা কান বন্ধ করে ঘুমানোর আগে দুদিন ব্যবহার করলেই দ্রুত উপশম হবে। (৬) বাতের ব্যাথা ও ফুলা যন্ত্রনায় আকন্দ গাছের আঠার সাথে খাঁটি শরিষার তেল মিশিয়ে মালিশ করলে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা যায়। (৭) গৃহ পালিত গরু-ছাগলের গলফুঁলা রোগে আকন্দ পাতা বেটেনিয়ে গলায় লাগিয়ে বালি গরম করে কাপড় দিয়ে ২-৩দিন তাপদিলে গলাফঁলা রোগ দ্রুত সেরে যাবে। (৮)  মানুষের শরীরের যে কোন আঘাত জনিত ফুঁলা জখক হলে আকন্দের পাতা দিয়ে তাপদিলে আরোগ্য হবে। (৯) বুকের জমাট বাধা কফ নিঃস্বরনে বুকে ভালভাবে পুরাতন ঘি মালিশ করার পর আকন্দের পাতাদিয়ে ঘন ঘন তাপদিলে কফ গলে দ্রুত বের হবে। (১০) আকন্দ পাতার রস নিয়মিত মাথায় ব্যবহার করলে টাক পড়া রোধসহ খুশকি দুর করে। (১১) দাতের ব্যাথায় আকন্দ পাতার রস তুলাদিয়ে দাতে লাগালে দ্রুত ব্যাথানাশ করে। (১২) আকন্দ পাতার রস ভালভাবে চুলায় ফুটিয়ে ৩-৪ চামুচ লবন দিয়ে খেলে ইহা কৃমিনাশকের কাজ করে(১৩)  আকন্দের শেকর ভালভাবে শুকিয়ে গুড়া করে ২ গ্রাম পরিমান কয়েকদিন নিয়মিত খেলে ক্ষুদামন্দাসহ হজম শক্তি বৃদ্ধিতে অতুলনীয় ফল হয়। (১৪)পায়ের গোদ হলে  আকন্দ গাছের শেকর  বেটেনিয়ে নিয়মিত প্রলেপ দিলে আরোগ্য লাভ করা যায়। (১৫) মানুষের শরীরের কাটাছেঁড়া, ক্ষতজনিত ফাঙ্গল থেকে রক্ষা পেতে আকন্দ পাতা সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে ক্ষতস্থান পরিস্কার করলে এটি এ্যান্টি-সেপ্টিক হিসেবে কাজ করবে। (১৬) আকন্দের পাতা বেটে মুখের ব্রনে লাগালে দ্রুত ব্রন ফেটে যায়

উপসংহারঃ-(Conclusion)- মোট কথা আকন্দ গাছকে একজন বাড়ীর অভিজ্ঞ ডাক্তার বলা হয়ে থাকে। এ কারনে প্রাচীন কালে প্রায় প্রতিটি বাড়ীর আশে পাশেই যত্ন সহকোরে আকন্দ গাছের চারা লালন পালন করা হত।

লেখক/Author

সাংবাদিক অমিতাব বর্মণ।

ভেন্ডাবাড়ী, পীরগঞ্জ-রংপুর।

বাংলাদেশ।

২৫/১২/২০২১ইং।


Sunday, December 19, 2021

তালগাছ (Palm trees) বিলুপ্তে শুধু প্রকৃতির ঐতিহ্য নয়, জীববৈচিত্রের প্রাণ শংসয়ও বটে !!

তালগাছঃ- ((Palm trees)-বিশ্বকবি, কবিগুরু  তার তালগাছ কবিতায় লিথখছিলেন-“তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে উঁকিমারে আকাশে” তালগাছ এক সময় বাংলাদেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলের মেঠোপথসহ গ্রামাঞ্চলের পতিত জমিসহ জমির আইলেও অহরহ সারি সারি চোঁখে পড়ত। যা দেখে রীতিমত নয়ন জুড়িয়ে যেত। অপরুপ সাজে প্রকৃতির ঐতিহ্যকে গুরু গম্ভীরভাবে ফুটিয়ে তুলতো এই তালগাছ। তালগাছ শুধু প্রকৃতির ঐতিহ্য বা শোভাবের্ধেনে নয়, এ গাছটি পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্রের জীবন রক্ষায় যথেষ্ঠ ভূমিকা পালন করে থাকে। এ জন্য পরিবেশ বিদ ও উদ্ভিদবিদদের মতে তালগাছকে পরিবেশ ও জীবৈচিত্রের পরম বন্ধু বলা হয়ে থাকে। কালের বিবর্তনে উন্নয়নের যাতাকল এবং দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে পতিত জমিতে আবাসন ও বসতবাড়ী নির্মান করতে গিয়ে এ গাছগুলি কেটে বা উপড়ে ফেলে এর বিলুপ্ত ঘটানো হচ্ছে। পরিবেশবিদ প্রকৃতি বিজ্ঞান মতে বর্তমানে এটি সংরক্ষনে সরকারি কিংবা বে-সরকারি জোড়ালো কোন উদ্দেগ গ্রহন না করলে আগামী প্রজন্মের জীববৈচিত্রের বংশ বিস্তারে ভয়ানক মাশূল গুনতে হবে।

তাল এখন একটি দুর্লোভ ফলঃ (Rhythm is now a rare fruit)- পাকাঁতাল কিছুদিন আগেই গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজার গুলোতে হরহামেশাই পাওয়া যেত। বর্তমানে তা  পাওয়া কঠিন ব্যাপার। তালের বর্তমানে যথেষ্ঠ কদর থাকলেও  হাট-বাজার গুলোতে তেমন চোখে পড়েনা। বর্তমানে একটি তাল গ্রামাঞ্চলেই ৫০ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছ, ঢাকা শহরে ১শত থেকে ১৫০ টাকা প্রায়। 
তালফল একাধিক সুস্বাধু খাবার তালিকায়ঃ-(Fruits are on the list of multiple delicacies) তালফল কাঁচা-পাকাঁ দু অবস্থাতেই খেতে অত্যান্ত সুস্বাদু। তাল গাছের রস থেকে তালমিশ্রি গুড় তৈরি করা হয়ে থাকে। স্ত্রী ও পুরুষ উভয় তালগাছ থেকে রস সংগ্রহ করা যায়। একটি তালগাছ থেকে দৈনিক ৮-১০লিটার পরিমান রস সংগ্রহ করা যায়। পাকাঁ তালের রসদিয়ে তালপিঠা একটি মজাদার খাবার, তালের গুড় দিয়ে পাঠালি, িবড়া, লুচি পায়েস ইত্যাদি তৈরি হয়। কাঁচা অবস্থাতেও তালের শ্বাস খেতে অত্যান্ত রস গোল্লার ন্যায় রসালো ও সুস্বাদু হয়ে থাকে। শ্রাবনওভাদ্রমাস হচ্ছে পাকাঁ তালের মৌসুম।
তালগাছের কোন অংশ অপ্রয়োজনীয় নয়ঃ(No part of the palm tree is unnecessary) প্রাচীনকাল থেকে তালগাছ মানব জীবনের ব্যবহারিক জীবনে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করে আসছিল। অধুনিকতার ছোঁয়ার পূর্বে গরমের সময়ে তালপাতার হাতপাখাই ছিল একমাত্র ভরসা। শুধুকি তাই ? তালপাতা দিয়ে আরও তৈরি হত-মাদুর, মাদুলি, টুপি, ছাতা, বাজার করা থলে, ঝুড়ি, ব্রাশ, পাপোশ, বাস্কেটসহ মাছ ধরার নানা উপকরন। এ ছাড়াও তাল পাতার মাঝের শলার ন্যায় আশঁ দিয়ে তৈরি করা হত বিভিন্ন প্রকার ঝাড়ু সহ ঘরের দরজা ও জানালার কাটি পর্দাসহ  এর পাতাদিয়ে ঘরের ছাউনিও দেয়া হত। যা অত্যান্ত মজবুত ও সর্বদা পরিবেশ বান্ধব। রান্নার কাজেও লাকড়ি হিসেবেও ব্যবহার হত এ তাল পাতা। তালগাছের গোঁড়ার অংশ দিয়ে সেই সময় ডিঙ্গি নৌকা, ঘরের খুঁটি, আড়া, রুইয়া, বাটাম, কৃষকের লাঙ্গলের ঈসও তৈরি করা হত। যা গ্রামীন অর্থনীতিতে একটি বিশেষ অবদান রাখতো।
তালফলের পুষ্ঠি ও ঔষধিগুনঃ-  (Nutrition and medicinal properties of palm) তালফলে অন্যান্য ফলের ন্যায় বিভিন্ন প্রকার মিনারেল ও ভিটামিন ছাড়াও ক্যালসিয়াম ও ক্যািলোরির উপস্থিতি অনেক বেশী পাওয়া যায়। বিভিন্ন চিকিৎসা শাস্ত্র থেকে জানা যায়-তালফলের রস পান করলে (১) শরীর ঠান্ডা রাখে (২) ক্লান্তি দুর করে (৩) দেহে প্রচুর শক্তি যোগায় (৪) অনিদ্রার অবসান করে (৫) পুরাতন আমাশয় নিরাময় করে (৬) নারী/পুরুষের মুত্র প্রবাহ কমে গেলে প্রবাহ বৃদ্ধিতে যথেষ্ঠ সহায়ক । (৭) কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেটের পীড়া উপশম করে (৮) পিত্তনাশক ও যকৃতের পীড়ায় যথেষ্ঠ উপকারি (৯) ইহা ছাড়াও তালের রসের মিশ্রি বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের সর্দি-কাশিতে ফলপ্রদ কাজ করে। 
তালগাছ প্রকৃতি ও জীববৈচিত্রের প্রকৃত বন্ধুঃ-  (Palm tree is a true friend of nature and biodiversity) জলবায়ু গবেষক এবং পরিবেশ ও প্রকৃতিবিদদের মতে একমাত্র তালগাছেই হচ্ছে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্রের প্রকৃত বন্ধু। কারন প্রকৃতিতে যত প্রকার উদ্ভিদ গাছ রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশী পরিমানে অক্সিজেন সরবরাহ ও ক্ষতিকর পদার্থ ও বায়ু নিঃস্বরক কারি গাছই হচ্ছে তালগাছ। ফলে জীববৈচিত্রের জীবনকে সুস্থ্য ও সাভাবিক রাখতে এর জুড়িনেই। শুধু কি তাই ? বর্ষাকালে বজ্রপাতের হাত থেকে অসংখ্য পশু-পাখি ও মানুষের জীবন রক্ষায় তালগাছের বিকল্পি আর কিছু নেই। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ঘুর্নিঝড়, সাইক্লোন, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টির মত মহামারি থেকে রক্ষায়ি এই গাছ ঈশ্বরের আশীর্বাদ হিসেবে কাজ করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় বর্তমানে এ মহামুল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদটি বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। ফলে ধরে ধীরে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্রকে পড়তে হচ্ছে নানা প্রাকৃতিক রোষানলে। এ থেকে পরিত্রান পেতে হলে পতিত জমিসহ রাস্তার দুপাশে এবং উপকুলিও অঞ্চল গুলোতে লাগাতে হবে তালসহ পাম গোত্রিয় গাছ।
বর্তমানে বজ্রপাতে অসংখ্য মৃত্যুহার  ( At present innumerable deaths due to lightning) একটি বে-সরকারি সংস্থাসহ সরকারি জরিপ মেতাবেক জানা যায় ২০০৯-২০২০ইং সাল ৩ হাজারেরও অধিক লোক বজ্রপাতে মারাগেছে।  গড়ে প্রতি বছর ২৫০-৩০০জন লোকের প্রানহানি ঘটে থাকে। সরকারি ভাবে  ২০১৬ সালে  বজ্রপাতে মৃত্যকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সেই সাথে দেশব্যাপি সরকারি উদ্দেগে প্রায় ২লক্ষ তালগাছের চারা রোপন করা হয়। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনসহ বে-সরকারি সংস্থার মাধ্যমে জনসচেনতা সৃষ্টি পুর্বক সাধারন জনগোষ্টিকেও এগিয়ে আসা দরকার বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, নইলে তালগাছ বিলুপ্তে শুধু প্রকৃতি নয়, পৃথিবীর জীব বৈচিত্রের প্রান সংশয় মারাক্তক আকার ধারন করতে পারে বলে মনে করেন প্রকৃতি ও পরিবেশ বিষেশজ্ঞরা।
লেখক/Author
সাংবাদিক অমিতাব বর্মণ।
ভেন্ডাবাড়ী, পীরগঞ্জ-রংপুর।
বাংলাদেশ।
১৯-১২-২০২১ইং।

Monday, December 13, 2021

জবাফুল (Jaba flowers) শুধু শোভাবর্ধনে নয়, নানা ঔষধি গুনেও ভরপুর !!

জবা ফুলঃ-(Jaba flowers)-প্রাচীন কাল থেকেই নানা প্রজাতি ফুলের গাছ সংগ্রহ করে হিন্দু রাজা-জমিদার সহ বংশিও বা খানদানি পরিবার গুলোতে বাগান করে শোভাবর্ধন সহ ফুলের মোহিত সুগন্ধ গ্রহন করা হত। আর এ জন্য বাগান গুলি করাহত বাড়ীর উঠান, বাড়ীর আঙ্গিনা ও শোবার ঘরের জানালা বরাবরে। বাগান পরিচর্যার জন্যই মাসিক বেতন দিয়ে রাখা হইত মালি। পৃথিবীতে এমন কোন ব্যাক্তি নেই যে, ফুলকে ভালবাসেনা। ফুল শুধু শোভাবর্ধনই নয়, ফুলকে পবিত্রতার প্রতিক হিসেবেও গন্য করাহয় আদিকাল থেকে। আদিকালে কবিরাজি মোতাবেক গাছের ছাল, লতা-পাতা, শেকর, ফল ও ফুল দিয়ে নানা প্রকার জটিল রোগের চিকিৎসা করাহত। এর মধ্যে জবাফুল একটি অন্যতম উপাদান, এ ফুলে অসংখ্য রোগের চিকিৎসা করা হত।

জবা ফুলের জন্ম ও প্রকারভেদঃ-(Birth and types of jaba flowers)-জবাফুরের গাছ বহু শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট একটি গুল্ম জাতীয় ফুলগাছ। এ ফুলের গাছটি বর্তমানে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে পাওয়া গেলেও মুলত এটি আমাদের দেশীয় ফুল নয়। উদ্ভিদ গবেষকদের মতামত ও আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের বরাত দিয়ে জানা যায়-মূলত এ ফুল গাছটির জন্ম চীনদেশে। বর্তমানে এ ফুল গাছ শুধু চীন বা বাংলাদেশেই নয়, মধ্য প্রাচ্যেও দেশ গুলোতেও হর-হামেশায় দেখা মেলে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১৫ থেকে ২০ ধরনের জবা দেখতে পাওয়া যায়, এরমধ্যে ঝুমকো ও লঙ্কা জবা অন্যতম। এ ফুলটি লাল, সাদা, পাটকিলে, গোলাপি, হলুদ, কমলা, নীলচে ও নীলচে-বেগুনিসহ মিশ্র বর্ণেরও জবা দেখতে পাওয়া যায়।

জবা ফুল গন্ধহীন হলেও নানান ঔষধি গুনে ভরপুরঃ-(Although jaba flower is odorless, it is full of various medicinal properties)-বাহারী রঙ্গের এ মন মুগ্ধকর ফুলটি গন্ধহীন হলোও নানান জটিল ও কঠিন রোগ নিরাময়ে এর জুড়িমেলা ভার। এটি নিঃসন্দেহে একটি অতুলনীয় ঔষধি ফুল গাছ। আদিকাল থেকেই কবিরাজি মতে ও আয়ুবের্দীক শাস্ত্রে রোগ নিরাময়ে এর ব্যবহার চলে আসছে। বর্তমানে এটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতেও গবেষনা পূর্বক রোগ নিরাময়ে এ্যলোপ্যাথিক, ইউনানি, হারবাল ও হোমিওপ্যাথিক শাস্ত্রে রোগ নিরাময়ে এর ব্যবহার আসংখাজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। উল্লিখিত চিকিৎসা শাস্ত্র পর্যালোচনায় জানা যায়-এটির ব্যবহারে নি¤œলিখিত রোগ সমুহ অনায়াসে নিরাময় সম্ভব-(১) চুল, দাড়ি, গোফ ও চোখের ভ্রæ পাতলা হলে জবাফুল বেটে নিয়মিত লাগালে আশ্চার্য্যজনক ফল পাওয়া যাবে। (২) শরীরের চামড়া উঠা রোগসহ যে কোন চর্মরোগে এ ফুলের রস লাগালে অসম্ভব ফল পাওয়া যায়। (৩) অতিরিক্ত আহারে অস্বস্তি ও অতিরিক্ত বমি বমি ভাব দেখা দিলে ৪-৫টি জবাফুল বেটে শরবত খেলে দ্রæত আরোগ্যলাভ হয়। (৪) ডায়াবেটিস জনিত মাত্রাতিরিক্ত প্রসাব হলে কয়েকদিন নিয়মিত জবাফুলের গাছের ছাল বেটে বেলা ১ চা চামুচ করে বেলা খেলে দ্রুত মাত্রাতিরিক্ত প্রসাব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। (৫) চোখেঁ কোন প্রকার সংক্রমন হলে জাবাফুলের রস ২-৩দিন কয়েক ফোটা করে লাগালে দ্রুত উপশম পাওয়া যায়। (৬) মেয়েদের অনিয়মিত মাসিকের ক্ষেত্রে ২-৩টি পঞ্চমূখি জবাফুলের কুড়ি বেটে শরবত কওে কয়েকদিন খেলে দ্রুত তা স্বাভাবিক হয়ে যাবে। (৭) ঠান্ডাজনিত জ¦র হলে কয়েকটি জবাফুলের পাতা সিদ্ধ করে চা তৈরী করে কয়েকবার পান করলে দ্রæত তা নিয়ন্ত্রন হবে। (৮) সাদা জবার পাপড়ি সিদ্ধ করে সেই পানি পান করলে বিষন্নতা দুর হয়। (৯) লাল জবার সিদ্ধ পানি খেলে শরীরের অতিরিক্ত লৌহজনিত ঘাটতি কমায়। (১০) জবাফুলের পেষ্ট তৈরী করে মাথার তালুতে নিয়মিত ব্যবহার করলে চুল পাকা রোধ করা সম্ভব, এতে পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম থাকায় মাথার ত্বকের পুষ্টিসহ চুলের গোড়া মজবুত ও সতেজ হওয়াসহ খুশকি রোধে খুবই কার্যকারি ভুমিকা রাখে। জবাফুল ঔষধের উপকরন হিসেবে অবশ্যই ভালোভাবে পানি দিয়ে পরিস্কার করে নিতে হবে, সেই সাথে ইহা সংরক্ষনের জন্য ফ্রিজ ব্যবহার করতে হবে।

জবাফুলের বানিজ্যিক চাষৎ-(Commercial cultivation of jaba flower)-জবাফুরের গাছ বিশেষ করে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় ও অন্যান্য ধর্মীয় বংশীও পরিবার গুলোতে শোভাবর্ধণের জন্য দেখতে পাওয়া যায়। বর্তমানে ইহার ছাহিদা ও গুরুত্বেও কারনে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় কিছু কিছু নার্সারিতে বানিজ্যিকভাবে জবাফুলের চাষ করা হচ্ছে। যা বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানিতে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। আবার অনেক ঔষধ কোম্পানি রয়েছে-তারা নিজেরাই নিজস্ব বাগানেই জবাফুলের চাষ করছেন।

লেখক/Author

সাংবাদিক অমিতাব বর্মণ।
ভেন্ডাবাড়ী, পীরগঞ্জ-রংপুর।
বাংলাদেশ।
১৩/১২/২০২১ইং।



Thursday, December 9, 2021

শিম (Bean) চাষে হচ্ছে কৃষকের অর্থনৈতিক মুক্তি !!


শিমঃ- ( Bean)-শীতকালে শিম (Bean) একটি খুবই জনপ্রিয় ও সুস্বাদু সব্জি। প্রাচীন কাল থেকেই এ সব্জিটি বাড়ীর পতিত জমিতে মাচা করে পারিবারিক ভাবে শুধুমাত্র পরিবারের চাহিদা পূরনের জন্য সনাতন পদ্ধিতিতে চাষাবাদ হয়ে আসছিল। কিন্তু বর্তমানে অধিক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারনে এর চাহিদাও বেড়েছে দ্বিগুন হারে। আর চাহিদা পুরনের লক্ষে সরকার সরকারিভাবে জেলা- উপজলার কৃষি অধিদপ্তরের মাধ্যমে অধিক উৎপাদনের লক্ষে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে পরামর্শ দেয়াসহ ফ্রিতে উন্নত আগাম জাাতের বীজ, সার সরবরাহ করছেন আসছেন। আগাম জাতের শিম চাষে অধিক মুনাফা হওয়ায় বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য কৃষক বর্তমানে একরকে একর জমিতে বানিজ্যিক ভাবে শিমচাষ করে অর্থনৈতিক ভাবে মুক্তি লাভ করেছেন। শিমচাষে পুজিও লাগে কম, আপনি যদি নতুন কৃষক হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে শুরুটা কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শ নিয়ে আগাম জাতের শিমচাষ দিয়ে বানিজ্যিক ভাবে করতে পারেন।
শিমচাষের আধুনিক পদ্ধতিঃ-(Modern methods of bean cultivation)-আগাম জাতের শিমচাষ করতে হলে প্র্রথমে আপনাকে জমি নির্বাচন করতে হবে। এটি সব ধরনের মাটিতেই চাষ করা যায়, তবে দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটিতে ভালো ফলন হয়। সিম গাছ জলাবদ্ধতা সহনশীল নয়, তাই উচু জমি নির্বাচন করতে হবে, যেন জমিতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস থাকে। এ ছাড়াও আপনি বাড়ির চালে, মাচায়, রাস্তা বা পুকুরের পাড় এমনকি জমির আইল ও গুল্ম জাতীয় গাছে তুলে দিয়েও শিম চাষ করতে পারেন।
শিমের জাত নির্বাচনঃ-(Selection of bean varieties)-রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান জানান-বানিজ্যিক ভাবে শিমচাষ করতে হলে অবশ্যই শিমের ভাল জাত নির্বাচন করতে হবে। সে ক্ষেত্রে র্গ্রীষ্মকালীন শিমের জাত অটো শিম খুব উপযুক্ত। এটি বৈশাখ-জৈষ্ঠ মাসে বপন করলে শ্রাবণ মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত বিরামহীন ফলন দিতে থাকে। তবে এ সময় ফলন একটু কম হয়। এছাড়াও আইরেট, ইপসা-১ ও ২, বিইউ শিম-৪, বারি শিম- ৩ ও ৭ সহ আরো কিছু জাত আছে, উল্লেখিত জাতগুলির চেয়ে বর্তমানে আলোচিত আগাম জাতের শিম হিসাবে কেরালা শিম ১ এর স্থান সবার উপরে। আগাম চাষের জন্য পুটি শিম ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া মাঝারি আগাম জাত হিসেবে বিইউ শিম-৩ আগস্ট মাস থেকেই বপন শুরু করা যায়। শীতকালীন জাতের মধ্যে বারি শিম-১ হচ্ছে সব থেকে উপযোগি। এছাড়াও বারি শিম-৬, নলডগ, হাতিকান, গোলগাদ্দা সহ আরো বহু ধরনের শিমের জাত রয়েছে। গ্রীষ্মকালে কেজি প্রতি ১০০ থেকে ১৪০ টাকা দরে শিম বিক্রি হয়, এবং শীতকালে আগাম শিম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বিক্রি করা যায়।
জমি প্রস্তুতকরণ ও বীজ বপনঃ-(Land preparation and sowing of seeds)-বানিজ্যিক ভাবে শিমচাষ করতে হলে জমি ভালভাবে কয়েকটি চাষ ও মই দিয়ে জমি সমান করে নিতে হবে। শেষ চাষে জৈব/গোবর সার শতক প্রতি এক বস্তা, কিছু ছাই, খৈলও দিতে হবে। ৩ মিটার প্রশস্ত বেড তৈরী করে বেডের দুই পাশে ২ মিটার পর পর মাদা তৈরী করে প্রতি মাদায় ১০০ গ্রাম টিএসপি, ৫০ গ্রাম এমপি এবং সামান্য জীপসাম দিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে ১ সপ্তাহ রেখে দিতে হবে। মাদার গর্ত ২ ফিট ব্যস ও ১.৫ ফিট গভিরতা থাকে। আগাম চাষের জন্য জৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে আর শীতকালীন শিম চাষের জন্য শ্রাবণ-ভাদ্র মাসের মধ্যে বীজ বপন করতে হবে। মাদা প্রতি ৩-৪ টা করে বীজ সুস্থ চারা রোপন করতে হবে।
শিম গাছের পরিচর্চা ও মাচা প্রস্তুতকরণঃ-(Bean plant care and scaffolding preparation)-শিম গাছ ডাল পালা নিতে শুরু করার সাথে সাথেই মাচার ব্যবস্থা করতে হবে। মাচায় গাছ উঠার জন্য বাশের কঞ্চি অথবা বাতি পতে দিতে হবে। যাতে শিম গাছ খুব সহজেই মাচায় উঠতে পারে।
শিম গাছের সঠিক যত্ন ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ-(Proper care of bean plants and application of chemical fertilizers)-বানিজ্যিকভাবে চাষাবাদের ক্ষেত্রে সার প্রয়োগের বিকল্প নেই। ফলন সংগ্রহের পর বা গাছের অবস্থা বুঝে পরিমাণ মতো ইউরিয়া, পটাশ, ডিএপি, জিংক, বোরন ইত্যাদি সার দিতে হবে। মাটি শুকিয়ে গেলে পানির ব্যবস্থা করতে হবে। হরমন হিসেবে ফ্লোরা, লিটোসেন ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে। শিম গাছের গোড়ায় মাটি দিয়ে একটু উচু করে রাখতে হবে যাতে পানি জমতে না পারে। সর্বদা গাছের গোড়া আগাছামুক্ত রাখতে হবে, চারা রোপনের ২-৩ সপ্তাহ পর পর মাদা প্রতি ৫০ গ্রাম করে ইউরিয়া ও পটাশ দিতে হবে। গাছের গোড়ার মাটি সর্বদা আগলা রাখতে হবে, গাছ মাচায় ওঠার আগে নিচে যে শাখা-প্রশাখা বের হয়, তা ছেটে দিতে হবে। মাচায় গাছ অনেক ঘন হয়ে গেলে পাতা ছেটে মাচা ফাঁকা করে দিয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। অনেকগুলো লতা এক সাথে জোড় নিলে তা আলাদা করে দিতে হবে।
পোকামাকড় ও রোগ বালাই ব্যবস্থাপনাঃ-(Insect and disease pest management)-
শিমের সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা হল ফল ছিদ্রকারী পোকা ও জাব পোকা। চারা অবস্থায় পাতা সুড়ঙ্গকারী এ পোকা মহা ক্ষতিকর। লাল ক্ষুদ্র মাকড়ষা ও অনেক সময় বেশ ক্ষতি করে থাকে, ফুল ফুটলে থ্রিপস ক্ষতি করতে পারে। ফল পেকে এলে বিন পড বাগ বা শিমের গান্ধি পোকা ক্ষতি করে। আইপিএম পদ্ধতি অনুসরণ করে এসব পোকামাকড় দমনের ব্যসস্থা নিতে হবে। শিমের সবচেয়ে মারাত্মক ২টি রোগ মোজেইক ও অ্যানথ্রাকনোজ।
ফলনঃ-(Yield)সঠিক ভাবে যতœ নিলে শতক প্রতি ৭০ থেকে ৮০ কেজি এবং হেক্টর প্রতি ১৫ থেকে ২০টন ফলন হতে পারে। শিমের ফুল ফোটার ২০-২৫ দিন পর ফসল সংগ্রহ করা যায়। ৪ মাসেরও বেশী সময় ধরে শিমের ফল পাওয়া যায়। শিমচাষে যে কোন সমস্যায় আপনি সরকারের জেলা ও উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে পরমর্শ গ্রহন করতে পারেন।

লেখক/Author
সাংবাদিক অমিতাব বর্মণ।
পীরগঞ্জ, রংপুর।
০৯/১২/২০২১ইং।

Saturday, December 4, 2021

গরুর গাড়ী ( Bullock cart) গ্রামীন জনপদের হারানো স্মৃতি!!

গরুরগাড়ীঃ-(Bullock cart)-গরুরগাড়ী বাংলাদেশের লোকজ সাংস্কৃতিতে এক সময় গুরুত্বপূর্ন ঐতিহ্য বহন করতো। প্রাচীনকালে এদেশের মানুষের যোগাযোগ, ব্যবসা-বানিজ্যেসহ বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের খানদানি ঐতিহ্যি বহন করাসহ দেশের অর্থনীতিতে একটি বিষেশ ভুমিকা রাখতো।কালের বিবর্তনে গ্রামবাংলার জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি আজ বিলুপ্তির পথে। গ্রামীন জনপদের মেঠোপথের অপরুপ শোভাবর্ধন কারি এ গরুরগাড়ী এখন শুধুই স্মৃতি আর স্মৃতি।
গরুরগাড়ী তৈরীর উপকরনঃ-(Bullock cart making equipment)--শালগাছের কাঠদিয়ে দক্ষকারিগর দিয়ে তৈরি করা হত গাড়ীর দুইটি গোলাকৃতির বড় বড় চাাকা, চাকার উপরে লোহার মোটা পাত ঢালাই করে বসিয়ে দেয়াহত চাকার উপরে। তারপর লোহার মোটা ঢুড়ি (বুশ) দিয়ে দুই চাকার সংযোগ দেয়াহত। তারপর বাশ ঝাড়ের দুই থেকে তিন বছরের পুরাতন বড়বাশ সংগ্রহ করে গাড়ীর বিছানা সংযুক্ত করা হত। যা খুবেই মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী হত। স্বাস্থ্যবান বলদ ও ষাঁড় গরুদারা এ গাড়ী টানাহত। গরুদিয়ে এ সকল গাড়ীতে ৩৫ থেকে ৪০ মন মালামাল বহন করা সম্ভব।
গরুরগাড়ীর প্রচলনঃ-(Introduction of bullock carts)- বিভিন্ন দার্নিক ও ইতিহাস বিদদের গ্রন্থ্য পর্যালোচনা করে জানা যায়-আজ থেকে প্রায়  ১৫-১৬ শ’ বছর পূর্বে ভারতীয় উপমহাদেশের সিন্ধু প্রদেশে ব্যবসায়িক কাজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে মালামাল বহনের জন্যই সর্বপ্রথম এ গরুরগাড়ীর ব্যবহার শুরু হয়। তারপর থেকে ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ে গ্রাম থেকে গ্রামে। মাঝেমধ্যে প্রত্যন্ত এলাকায় দু-একটি গরুর গাড়ি চোঁখে পড়লেও শহরাঞ্চলে একেবারেই দেখা যায় না। সে কারণে শহরের ছেলে মেয়েরা দূরের কথা, বর্তমানে গ্রামের ছেলে মেয়েরাও গরুর গাড়ি শব্দটির নাম শোনার সঙ্গে চমকে উঠবে।

লোকজ সাংস্কৃতিতে গরুরগাড়ীঃ-(Bullock cart in folk culture)- মালামাল বহনের জন্য এ গাড়ীর সৃষ্টি হলেও পর্বতীতে লোকজ সাংস্কৃতিতে একমাত্র ঐতিহ্যবাহী বাহন হিসেবেই স্থান পায় এই গাড়ীটি। বিশেষ করে বিয়েসাদীতে টাবড়যুক্ত গরুগাড়ীতে গ্রামের মেঠোপথ দিয়ে সারি সারিভাবে বরযাত্রী বোঝাই গাড়ীতে ঢোল-সানাই বাজিয়ে কনের বাড়ীতে যাওয়া, সে এক অন্য রকম দৃশ্য। গরুর গাড়ী ছাড়া বিয়ে যেন ঐতিহ্যবিহীন  হয়ে যায়। গরুগাড়ির চালককে বলা হয় গাড়িয়াল। সেই গাড়ীয়ালকে উদ্দেশ্য করে বাংলাদেশের রংপুর অঞ্চলে বিখ্যাত বিখ্যাত ভাওয়াইয়া শিল্পীগন রচিত করেছেন অসংখ্য গান। যা আজও হৃদয় স্পর্শ করে। যেমন-“ ওকি গাড়িয়াল ভাই, কত রহিম মুই পন্থের দিকে চাহিয়ারে” । বর্তমানে কালের বিবর্তনে নানা ধরনের মোটরযানের কারণে ধীর গতির এই যানটির ব্যবহার কমতে কমতে প্রায় বিলুপ্তি প্রায়। এখন মানুষ বিভিন্ন ধরণের প্রয়োজনীয় মালামাল বহনের জন্য ট্রাক, পাওয়ার টিলার, লরি, নসিমন-করিমনসহ বিভিন্ন মালগাড়ি ব্যবহার করছে। মানুষের যাতায়াতের জন্য রয়েছে মোটরগাড়ি, রেলগাড়ি, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যান।

অর্থনৈতিক উন্নয়নে গরুরগাড়ীঃ-(Bullock carts for economic development)- প্রাচীনকালে বাংলাদেশের গ্রামীন জনপদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গরুরগাড়ীর যথেষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। গ্রামীন জনগোষ্ঠি তাদের উৎপাদিত কৃষিপন্য বিপননের জন্য মাইলকে মাইল দুরে তৎকালিন হাট-বাজারে নিয়ে যেত। ফলে গ্রামীন জনগোষ্ঠির অর্থনৈতিক মান উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখত। আগামী প্রজন্ম যাদুঘরে গরুরগাড়ী দেখে বা নাম শুনে অবাক হবে।

লেখক/Author

সাংবদিক অমিতাব বর্মণ।

ভেন্ডাবাড়ী, পীরগঞ্জ-রংপুর।

০৪-১২-২০২১ইং।


 

Tuesday, November 23, 2021

পান চাষে (Drink cultivation) অর্থ ও পানের ঔষধি গুন!!

 

পানঃ-

পান গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের একপ্রকার গুল্মজাতীয় গাছের পাতা। প্রচীন কাল থেকে মূখের দুর্গন্ধ নিবারন ও নিশ্বাসকে সুরভিত করতেই পান খাওয়ার সূচনা হয়। বাংলাদেশে ঐতিহ্যগতভাবে সামাজিক রীতি, ভদ্রতা এবং আচার-আচরণের অংশ হিসেবেই পানের ব্যবহার চলে আসছে দীর্ঘদিন থেক। অনুষ্ঠানাদিতে আহারের পর পান পরিবেশন করা না হলে কেমন জানি অপূর্নতাসহ অভদ্রতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। বাংলাদেশে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন ধরনের পান খেয়ে থাকে। তন্মধ্যে ঢাকাই খিলিপান বাংলাদেশ ও উপমহাদেশে বিশেষভাবে উল্লেখ্য। খানদানি ও উচ্চ বংশীয় পরিবার গুলোতে বয়োবৃদ্ধ মহিলাগণ পানদানিতে পান রেখে তাদের বন্দুবান্ধব ও আত্মিয়স্বজনের সাথে অবকাশ যাপন করে থাকেন। হিন্দু ধর্মালম্বীদের উৎসব, পূজা অর্চনায় এখনো পান একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এমন কোন পুজো নেই যে পান ছাড়া হয়।
পানচাষের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ-(A brief history of betel cultivation)-১৮৭২ এবং ১৮৮১ সালের আদমশুমারিতে দেখা যায় যে, সবচেয়ে বেশী পান উৎপাদন হত বর্ধমান, মেদিনিপুর, যশোর এবং ঢাকা, দিনাজপুর ও রংপুর জেলায়। বাংলাদেশে আদিকাল থেকেই হিন্দু ধর্মালম্বীরাই পান চাষের সূচনা করে। হিন্দু সম্প্রদায়ের বারুই  সম্প্রদায় এ পান চাষ করত। ১৯৪৭ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে বাংরাদেশে বর্তমানে পান উৎপাদনের সিংহভাগই হচ্ছে মুসলমান কৃষকদের হাতে। শুধু বাংলাদেশে বসবাসকারী আদিবাসী বা নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠির মধ্যে খাসি-রাই একমাত্র আদিবাসী যাদের প্রধান পেশা পান চাষ। ঊনবিংশ শতাব্দীতে অনেক বারুই জমিদারি ও তালুকদারির মালিক হয়। মুসলমান শাসনামলে কৃষকদের মাঝে বারুই শ্রেণি ছিল সবচেয়ে বেশি ধনী।

পানের ঔষধি গুনাগুণঃ-(Medicinal properties of the drink)-১. পান পাতা খাওয়ার ফলে যে রস উৎপাদন হয় তা আমাদের দাঁত আর মাড়ি সুস্থ রাখে। ২. পান পাতার রস আমাদের মুখের ভেতরটা পরিষ্কার রাখে, এমনকী মুখের মধ্যে রক্তপাতও বন্ধ করে, সান স্ট্রোক হওয়ার ফলে নাক দিয়ে রক্ত পড়লে পান পাতা পাকিয়ে তা নাকের মধ্যে গুঁজে দিয়ে, মাথা পিছনের দিকে হেলিয়ে রাখেলে কিছুক্ষণের মধ্যেই রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে। ৩. কানের ব্যথা কমাতে কয়েক ফোঁটা পানের রস আর কয়েক ফোঁটা নারকেল তেল একসঙ্গে মিশিয়ে কানের মধ্যে দিলে ব্যথা কমে যাবে। ৪. ছোটখাটো কাটা ছেড়ায় পান পাতা বেটে লাগিয়ে দিলে এটি এন্টিবায়োটিক এর কাজ করবে। ৫. গোসল করার পানিতে কিছুটা পান পাতার রস পািনতে মিশিয়ে গোসল করলে সারাদিন ফ্রেশ লাগবে। পান পাতা দিয়ে পানি ফুটিয়ে ঠান্ডা করে সেই পানি পান করলে ঘামের গন্ধ কমাসহ পানে মহিলাদের মেনস্ট্রুয়েশন স্মেল ও কমানো সম্ভব। ৬. কিডনি রোগীরা দুধের সাথে পান পাতা বেটখেলে প্রস্রাবের কষ্ট থেকে আরোগ্য লাভ করবেন। পান পাতায় শরীর থেকে দ্রুত পানি বের করে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে ।  ৭. পান পাতার রস সেবনে মহিলাদের প্রসস্থ্য  যোনিপথ সংকুচিত করতে যথেষ্ট কাজ করে। ৮. কয়েক ফোটা পান পাতার রস আর কাঁচা হলুদ এক সঙ্গে বেটে নিয়ে কয়েকদিন স্কিন অ্যালার্জি‚ ফুসকুড়ি‚ কালো ছোপ‚ সান বার্নে লাগালে দ্রুত উপসম পাওয়া যাবে। ৯. মাথা ব্যথায় কয়েক ফোটা পান পাতার রস কপালে মালিশ করলে নিমিষেই আরোগ্য লাভ হবে।  ১০. মহিলা /পুরুষের গোপনাঙ্গের আশে-পাশে ও পায়ের আঙ্গুলের ইনফেকশনে কয়েকদিন পানপাতার রস লাগালে দ্রুত আরোগ্য লাভ করবেন।  ১১.  মধুর সঙ্গে পান পাতা বেটে খালে শরীর ও মনের এনার্জি শক্তি বৃদ্ধি পায়।  ১২. সরিষার তেল আর পান পাতার রস গরম করে বুকে লাগালে শীতে শরীর গরম থাকবে। পান পাতা‚ এলাচ‚ লবঙ্গ একসঙ্গে ফুটিয়ে খেলে সর্দিকাশিতে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা যায়।  ১৩. পান হজমে সাহায্য করাসহ গ্যাস‚ অম্বলও কমায়। ১৪. পান শরীরের ব্লাড সার্কুলেশন কমে গেলে তা বৃদ্ধিতে সহায়াতা করে। ১৫. পান খুদামন্দা দুরকরাসহ পেট ফাঁপা কমায়। ১৬. পান পাতা বেটে ক্ষতস্থানে লাগালে সংক্রমনের ভয় থাকেনা, এটি ব্যবহারে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা যায়। পানের রসে বেদনানাশকের উপসম হয়। ১৭. নিয়মিত পরিমিত পানের সাথে সুপুরি, চুন, লবঙ্গ খেলে যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়।

পান একটি অর্থকারি ফসলঃ-(Drink is a cash crop)-বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ভারত, সৌদিআরব, আরব-আমিরাত, ইংল্যান্ড, ইতালি, জার্মানি সহ এশিয়া-ইউরোপের আরও অনেক দেশে পান রপ্তানি করা হচ্ছে । বিদেশে রপ্তানীযোগ্য পান উৎপাদন হয় বাংলাদেশের নাটোর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা প্রভৃতি জেলায়।  বাংলাদেশে  স্বাধীনতার পর থেকে ইউরোপে পান পাঠানো শুরু হয়। সৌদি আরবে পান পাঠানো হয় ১৯৯১ সাল হতে। বর্তমানে বাংরাদেশে একটি খিলিপান স্থান বিশেষে ৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বিক্র হয়। বাংলাদেশের অনেক কৃষকেই পানচাষ করে বছরে লক্ষ লক্ষ টাকা আয করছেন। বর্তমানে পানচাষে অধিক মুনাফা হওয়ায় অনেক বিত্তশালী কৃষক পানচাষের দিকে বিনিয়োগ করছেন, কারন কৃষিক্ষেত্রে বর্তমানে পানচাষে দ্রুত স্বাবলম্বী হওয়া যায।

লেখক/Author

সাংবাদিক অমিতাব বর্মণ।

ভেন্ডাবাড়ী, পীরগঞ্জ-রংপুর।

বাংলাদেশ।
২৩-১১-২০২১ইং।